নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি তুলে ধরে নেচে-গেয়ে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায় পালন করল নবান্ন উৎসব। নবান্ন উৎসব যা ত্রিপুরা ভাষায় মাইক্তা চাম পান্দা বলে থাকে। অর্থাৎ জুমের উপর ভিত্তি করেই ত্রিপুরাদের অর্থনীতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ত্রিপুরাদের নাচ, গান, ছড়া, গল্প, মূল্যবোধ, বাদ্য-যন্ত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি গড়ে উঠেছে জুম চাষকে কেন্দ্র করে।
ত্রিপুরা জনজাতির নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (২৪শে নভেম্বর) দিনব্যাপী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইনস্টিটিউ সহযোগীতায় হাতি দাত ভাঙ্গা কমিউনিটি সেন্টারে জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানস্থলে নৃত্য পরিবেশন মধ্য দিয়ে নতুন বছরের জুমের ফসল ঘরে তোলার আনন্দে মাইক্তা চাম পান্দা উৎসবে মেতে ওঠে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অতিথিরা। এসময় এক ধরণের মিলন মেলা পরিণত হয়েছে।
পাহাড়িরা জানান, বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দেওয়া হয়। মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ শুরু করে বম জনগোষ্ঠীসহ জুমিয়া পরিবারগুলো। প্রায় ৩-৪ মাস পরিচর্যার পর বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পাহাড়ে উৎপাদিত জুমের ফসল গড়ে তোলা শুরু করে।
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা জানান, প্রথমে দেবতার উদ্দেশ্যে জুমের উৎপাদিত প্রথম ফসল উৎসর্গ করা হয়। এবং আগামী বছরে আবারও ভালো ফসল ফলনের জন্য শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। তারপর আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে জুমে উৎপাদিত ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন জুম ফসল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে খাওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউটের পরিচালক মং নু চিং এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউটের পরিচালক মং নু চিং বলেন, ইংরেজি সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এবং বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে পাহাড়ে বসবাসরত বিশেষ করে পাহাড়িরা তাদের উৎপাদিত জুমের ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে নিজেদের ঐতিহ্যগত বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করে থাকে। বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউট এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়েরএই উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তাদের বৈচিত্র্যময় এই উৎসব গুলো টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিউট কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের এই উৎসবগুলো সম্প্রতির পরিচয় বহন করে। এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় এই আনুষ্ঠানিকতা আমাদের মুগ্ধ করে। এই উৎসবমুখর পরিবেশ পাহাড়ে বাংঙ্গালী ও পাহাড়িদের ভাতৃত্বের বন্ধনে ঐতিহ্যের সৌন্দর্য বজায় রেখে সহাবস্থান নিশ্চিত করবে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে জেলা পরিষদের সদস্য সি অং ম্রো, বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ফজলুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লা আল মামুন, রাজীব কুমার বিশ্বাস সহ প্রেসক্লাব সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু সহ পাড়া কারবারি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।