সুমন্ত চাকমা, জুরাছড়ি।
ছবি দেখে মনে হতে পারে, ফটোশপ করা ধানখেত বা দূর থেকে দেখে মনে হবে, ধানের খেতে বুঝি কোনো রোগ লেগেছে অথবা পোকার আক্রমণে সারা খেতের ধান বেগুনি হয়ে গেছে। আসলে এর কোনোটিই নয়। এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতার রংটাই বেগুনি।
শুধু কি পাতার রং? ধান ও চালের রংও বেগুনি বা পার্পল হতে পারে। তবে এ জাতের ধান চাষ উপজেলায় প্রথম চাষাবাদ করা হচ্ছে। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এই ধান অপরিচিতি। এ ধান নিয়ে বিভিন্ন কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে কৃষকদের মাঝে। উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবী এটা বিদেশি কোনো জাত নয়, আমাদের দেশীয় ধানের জার্মপ্লাজম।
উপজেলা সদরের ৪ শতাংশ জমিতে এই ধানের চাষ করেন রুপেন্দু চাকমা। তিনি জানান, হাইব্রিড ধান চাষে দিন দিন স্থানীয় বীজ হারিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সব সময় একই ধানের বীজ চাষাবাদে ফলনও কমে গেছে।
কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় নতুন বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদের উৎসাহিত হই। সেই শখের বশেই চলতি বোরো মৌসুমে ৪ শতাংশ জমিতে করেছেন পার্পল ধানের চাষ।
রুপেন্দু চাকমার ভাষ্যমতে, সংবাদপত্রে বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার একটি জমিতে বেগুনি রঙের কিছু ধান চাষাবাদের প্রতিবেদন নজরে আসে। প্রতিবেদনটি দেখেই জিনিসটা কী ছিল, তা ভাবতে ভাবতেই প্রতিবেদন পড়া শেষ করেন। কিন্তু কৌতূহল দমাতে না পেরে বেগুনি ধান চাষাবাদ বিষয়ে কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা ও চাষাবাদের জন্য পরামর্শ নেন।
স্থানীয় ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুভক্ষণ খীসার পরামর্শ মোতাবেক তিনি অত্যন্ত যত্নসহকারে পেট্রিডিসে অঙ্কুরোদ্গম করে তারপর বীজতলায় ফেলেন। পরে ৪০ দিন বয়সের চারা প্রতি গুছিতে একটি করে দিয়ে ৪ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। প্রতি গুছিতে ১০-১৪টি কুশি রয়েছে। গাছের উচ্চতা ৮০ সেন্টিমিটার।
ধানগাছগুলো গাঢ় বেগুনি রঙের। কিন্তু কচি পাতাগুলো সবুজ রঙের। এই সবুজ পাতায় পর্যায়ক্রমে বেগুনি রং ধারণ করে।
রুপেন্দু চাকমা জানান, তিনি প্রথমে বিষয়টি কাউকে জানাতে চাননি। এ বছর সফলভাবে বীজ উৎপাদন করে পরেরবার সবাইকে জানানোর ইচ্ছা ছিল তাঁর।
তিনি বলনে, তাঁর পার্পল ধানের জমিটি এখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ব্রির বিশেষ পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
জুরাছড়ি উপজেলায় চাষাবাদ কৃত পার্পল রাইসের জমিটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।
তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ের অবস্থা বিবেচনায় ধানটির জীবনকাল কম-বেশি ১৫৫ দিন এবং ফলন আনুমানিক শতাংশে ২০ কেজি (৪-৫ টন/হে.) হতে পারে।
কৃষি কর্মকর্তাদের ধারণা করছেন, চালের রং বেগুনি হলে ধানটি উচ্চমূল্যের হবে।
তবে কৃষক রুপেন্দু বলেন, সংগ্রহকালীন চালের রং অন্যান্য উফশী জাতের মতোই দেখেছেন। তাই সব বিষয় জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।