টানা দুই দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের দুই-একটি জায়াগায় পাহাড় ধস হলেও বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অপরদিকে চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা সদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চেঙ্গী নদীর পানি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কলাবাগান এলাকায় আজ (শুক্রবার) সকালে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গতকাল বিকালে জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনারদের বাসভবনের সীমানা প্রাচীর ধসে পড়েছে।
জেলা সদরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কলাবাগান, শালবাগান, রসুলপুর ঘুরে দেখা যায়, পাহাড় কেটে যেসব ঘরবাড়ি তোলা হয়েছে, সেই সব স্থানে কিছু কিছু পাহাড় ধসে পড়েছে। বৃষ্টির পানি মাটি ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার হিসেব মতে পৌর এলাকার অভ্যন্তরে অন্তত দুই শত পরিবার পাহাড় ধসের ঝুকির মধ্যে রয়েছে।
অপরদিকে চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খাগড়াছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি এখনো বাড়ছে। জেলা সদরের খবংপুড়িয়া, বাঙ্গালকাঠি, বৃহত্তর গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল, মহালছড়া, গড়গয্যাছড়ির নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
খগিড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: দিদারুল আলম পৃথক পৃথকভাবে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ভোগান্তিতে থাকা মানুষের কষ্ট লাঘবে সহায়তার হাত বাড়ান। তাঁরা ভূমিধ্বসের ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে দিনভর তৎপরতা চালান।
জেলা শহরের বিভিন্ন প্লাবিত ও ভূমিধ্বসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যুব রেড ক্রিসেন্ট’র কর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
এদিকে অতি ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে মাইনি ও চেঙ্গী নদীতে পানি বাড়ায় সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে জেলার মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়ন ও জেলার সদরের ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় লংগদু ও সাজেক পর্যটন কেন্দ্রের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ধর্মজ্যোতি চাকমা বলেন,” পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়ন ও কবাখালি ইউনিয়নে ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে মাইনী নদীর পানি বেড়ে বন্যর সৃষ্টি হয়েছে।সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করছি”
পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেড কোয়াটার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার। এছাড়া খাগড়াছড়ি -সাজেক সড়কের কবাখালিতে সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটিরর সাজেকের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান শেষ বিকেলে খাগড়াছড়ি শহরের প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা, জরুরী ভিত্তিতে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রসমূহ এবং সদরের বেশকিছু এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি তাৎক্ষণিক জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সজাগ থাকার নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার- সুপেয় পানি এবং নৈশ ভোজের জন্য খিচুড়ি পরিবেশনের বরাদ্দ প্রদান করেন।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) ভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। যদি রাতেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে পরিস্থিতি ব্যাপক নাজুক হবার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।