রাঙামাটির সবচেয়ে খারাপের দিকে বাঘাইছড়ির পরিস্থিতি। বুধবার সকাল থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে, যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিপাতে সদরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস হচ্ছে। ফলে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
অব্যাহত টানা বৃষ্টিপাতে রাঙামাটিতে বন্যার অবনতি ঘটেছে। সদরসহ জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব প্লাবিত গ্রামের অসংখ্য পরিবারের বাড়িঘর ও স্থাপনা।
জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় বিস্তীর্ণ নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ১৫ হাজারেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামে বন্যার পানি উঠেছে। এছাড়া উপজেলার বারেবিন্দু ঘাট এলাকার একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানি ঢুকেছে পৌর এলাকায়। পানি ঢুকে পড়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ ভবনে। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে বন্যাদুর্গতরা। অনেক স্থানে বন্যার পানিতে গবাদি পশু ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। বর্তমানে চরম মানবেতর পরিস্থিতির সম্মুখীন দুর্গত লোকজন। বন্যার্তদের সহায়তায় মাঠে তৎপর রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যার্ত লোকজনের আশ্রয়ে উপজেলায় মোট ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২২টি কেন্দ্রে প্রায় দুই হাজার দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্গত লোকজনের মাঝে জরুরি ত্রাণ, বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। এ উপজেলায় দুর্গত লোকজনের ত্রাণ সহায়তা দিতে জেলা প্রশাসন থেকে তাৎক্ষণিক ২৫ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার জানান, উপজেলা ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। কেন্দ্রে আশ্রিত লোকজনের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলা ছাড়াও সদরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলসহ কাউখালী, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বহু বাড়িঘর ও ফসলি জমি ডুবে গেছে। জেলার কাউখালী উপজেলার ইছামতি খাল ও কাউখালী খালে পানি বেড়ে বেশকিছু বাড়িঘর ডুবে গেছে বলে জানা যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের তৎপরতা চলছে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় দুর্গত লোকজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে বলে জানিয়ে জেলা প্রশাসন।
এছাড়া টানা বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত হ্রদে পানির পরমিাণ ছিল ১০৩ ফুট বা এমএসএল (মীন সী লেভেল)। এর পরিমাণ ১০৪ ফুট অতিক্রম করলে বাঁধের স্প্রিলওয়ে দিয়ে পানি ছাড়তে হবে বলে জানান, কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের।
তিনি জানান, কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট। ১০৭ ফুট হলে বিপৎসীমা হিসাবে পরিগণিত হয়।
এদিকে টানা ৮ দিনের বর্ষণে রাঙামাটির অন্তত ২০টি স্পটে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায় পাহাড় ধসে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন অপসারণ করায় প্রায় দুই ঘন্টা পর সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
এছাড়া রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের মহালছড়ি এলাকায় সড়কের ওপর এবং রাঙামাটি সদরের কুতুকছড়িতে বেইলি ব্রিজে পানি ওঠে যাওয়ায় সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং নদীর পানি বেড়ে খাগড়াছড়ি-সাজেকের একাধিক স্থানে সড়ক ডুবে যাওয়ায় এখনো যান চলাচল স্বাভাবিক হতে পারেনি। ফলে সাজেকে বেড়াতে যাওয়া দুই শতাধিক পর্যটক এখনো আটকা আছেন বলে জানা যায়।
জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, জেলায় ছোট-বড় কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও কোথাও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। রাঙামাটি সদরে পাহাড় ধসে ঝুঁকিতে থাকা প্রায় দেড় হাজার মানুষকে নিরাপদে বা আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের জন্য শহরে এবং বিভিন্ন উপজেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। এছাড়া বাঘাইছড়িতে বন্যার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় প্রায় দুই হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।