সরকারী টাকায় রাঙামাটি আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক এমপি দীপংকর তালুকদারের নামে কাউখালীর বেতবুনিয়ায় কলেজ নির্মাণের প্রতিবাদে এবং কলেজের নাম পরিবর্তনের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে উপজেলা বিএনপি।
সোমবার সকাল ১০টায় প্রেসক্লাব চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে দলটি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিগত ১৭ বছর কাউখালীর মানুষের কাছে বেতবুনিয়া ইউনিয়ন ছিলো মূর্তিমান এক আতংকের নাম। খুন, গুম, দখলসহ এহেন কোন অপকর্ম নেই যা এ ইউনিয়নে ঘটেনি।
বেতবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আকবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মোতালেব, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাজাই মং মারমা, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সদস্য আবুল কাশেম, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোঃ সগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ তারা মিয়া, বেতবুনিয়া ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ জয়নাল আবেদীন, জাসাস সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন, কৃষকদলের সভাপতি শওকত হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তামজীদ উদ্দিন, তাতী দলের সভাপতি আলী হায়দার, শ্রমিক দলের সভাপতি সেকান্দর, মৎসজিবী দলের সভাপতি আবু জাফর প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনার দোসর, কাউখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর নির্দেশে ২০১২ সালে তার লেলিয়ে দেয়া বাহিনী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীদের দিয়ে যুবদল নেতা আরিফ ও চিংখ্যাইমং মারমাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জোড়া হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে কাউখালীতে নব্য ফ্যাসিবাদের স্বরূপ উন্মোচন করে আওয়ামী লীগ। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, জ্বালিয়ে দেয়া হয় বিএনপি নেতা পাইচিং মং মারমার বাড়ী ঘর। যার বিচার আজও হয়নি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ২০২৩-২৪ইং অর্থ বছরে বেতবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে সরকারী অর্থায়নে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বহু প্রতিক্ষীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর এলাকার মানুষ আশান্বিত হলেও সরকারী অর্থায়নে করা কলেজকে নিজের নামে নামকরণ করে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের দোসর রাঙামাটির ২৯৯নং আসনে বিনা ভোটের সাবেক এমপি দীপংকর তালুকদার। কলেজের নাম দেয়া হয় দীপংকর তালুকদার কলেজ।
এতে আরো বলা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী ক্ষমতার অপব্যবহার করে, সরকারী অর্থায়নে হওয়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মারাত্মক বৈষম্য সৃষ্টি মাধ্যমে তার ছেলে ছাত্রলীগ পদধারী ক্যাডার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার পরিকল্পনাকারী এবং আন্দোলনরত কোমলমতি ছাত্রদের পাকিস্তানি রাজাকার বলা অনুমং চৌধুরীসহ তার একান্ত অনুগত ব্যক্তি ছাড়া কেউ নিয়োগ পাননি এ কলেজে।
যাচাই করা হয়নি যোগ্যতার। ফলে এসব নিয়ে জনমনে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। তৎসময়ে এই মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার মতো সাহস পায়নি। নিরব প্রতিবাদ স্বরূপ ২০২৪ইং সনে এই কলেজে কেউ ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। কিন্তু তারা অংসুইপ্রু চৌধুরীর গুন্ডাবাহিনী দিয়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে হুমকী প্রদর্শন করে জোর পূর্বক কিছু অভিভাবকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করাতে বাধ্য করে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ৫ আগষ্টের গণহত্যার পর ফ্যাসিবাদের দোসররা পালিয়ে গেছে। কিন্তু কলেজের সাইনবোর্ডে দূর্নীতিবাজ দীপংকরের নাম আজও রয়ে গেছে। এলাকার মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় এখনো পতিত নেতার নামে করা ঐ কলেজের কোন স্থাপনায় হাত দেয়নি।
ফ্যাসিবাদ পতনের ৬ মাস পার হলেও বেতবুনিয়া কলেজ থেকে দীপংকরের নাম এখনো সরানো হয়নি। সরকারি অর্থায়নে করা কোন প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির নামে হতে পারেনা। এ নিয়ে জনমনে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিতে শুরু করেছে।
বিএনপি নেতারা বলেন, জনগণ ফুঁসে ওঠার আগেই বেতবুনিয়া কলেজ থেকে দীপংকরের নাম বাদ দিয়ে “বেতবুনিয়া কলেজ” নাম করণের জন্য উপজেলা বিএনপি ও বেতবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপি জোর দাবী জানাচ্ছে।