রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের একমাত্র পুরনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অবস্থিত সফিপুর এলাকায়। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার আশ্রয়স্থল হলেও বর্তমানে ঔষধ সংকট, জনবল ঘাটতি ও ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একতলা ভবন ও কর্মচারীদের পুরনো টিনশেড কোয়ার্টারগুলো ভগ্নদশায় দাঁড়িয়ে আছে। রোগীদের ব্যবহারের জন্য নির্মিত স্যানিটারি টয়লেট অকেজো হয়ে পড়েছে। শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ওজন মাপার যন্ত্রসহ কয়েকটি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা উপকরণও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় মো. ফিরোজ আহমদ অভিযোগ করে বলেন, “ঠিকমতো ডাক্তাররা অফিসে থাকেন না। নিয়মিত ওষুধও পাওয়া যায় না।” তিনি জানান, এখানে কর্মরত দুইজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসারের মধ্যে একজনকে সচরাচর পাওয়া গেলেও অপরজন সপ্তাহে এক-দুদিন অফিসে আসেন। ডিপোটেশনে দায়িত্ব পাওয়া আরেকজন কর্মকর্তার উপস্থিতিও অনিয়মিত।
নাম প্রকাশ না করা এক বৃদ্ধা রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে গেলে সামান্য কিছু প্রাথমিক ওষুধ মেলে, কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না।”
অন্যদিকে স্থানীয় এক অভিভাবক জানান, “শিশুরা অসুস্থ হলে আমরা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটি। কিন্তু এখানে কোনো ঔষধ না থাকায় বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন বাজারে ঔষধের দাম বাড়ছে, যা আমাদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
উপসহকারী পরিবার পরিকল্পনা মেডিকেল অফিসার মো. আজিজুল ইসলাম সিরাজী জানান, কমপ্লেক্সে বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ছয়জন। তাদের মধ্যে একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার অবসরে গেছেন। ডিপোটেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সপ্তাহে দুই একদিন অফিসে আসেন। কর্মরতদের মধ্যে একজন নৈশ প্রহরী, একজন মহিলা ফার্মাসিস্ট, একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা এবং তিনজন অফিসকর্মী রয়েছেন। তবে অনেক সময় তাদের অনুপস্থিতিতেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ না থাকায় রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। প্রসূতি ও অন্যান্য জরুরি রোগীরাও যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থায় স্থানীয়রা দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, ঔষধ ও পর্যাপ্ত জনবল সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সচেতন মহল জানান, প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন ও কর্মচারী কোয়ার্টারগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের ভেতর ফাটল, ভাঙা দরজা-জানালা এবং নষ্ট ছাদ প্রতিদিনই ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা বলেন, “সরকারি পর্যায়ে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ এবং উন্নত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা জরুরি।”
এ বিষয়ে জানতে রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নতুন ভবন নির্মাণ, পর্যাপ্ত ডাক্তার নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে এ অঞ্চলের জনগণ উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে এবং নানান রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবে।