খাগড়ছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউপির চংড়াছড়ি এলাকায়, সৎ মায়ের কু-পরামর্শে পিতা সোহরাপ হোসেন (৬৫) কতৃক ৪ কন্যাকে নির্যাতন , হয়রানি, মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। ৪ কন্যার সংবাদ সম্মেলন করার পর দিন সংবাদ সম্মেলন করে আনিত অভিযোগ মিথ্যা বলেছেন পিতা সোহরাপ হোসেন।
১১ মে সকাল সাড়ে ১১ টায় দীঘিনালা উপজেলা বাস স্টেশন সংলগ্ন হোটেল ইউনিটর হল রুমে সংবাদ সম্মেলনে করেন চার কন্যা। দ্বিতীয় কন্যা খাদিজা আক্তার(২৬) অভিযোগ করে বলেন, বড় বোন মারুফা আক্তার ৭, খাদিজা আক্তার ৫, জেসমিন ৪, সুমাইয়া আক্তার ২ বছর থাকা কালীন সময়ে আমাদের মাতা পরিতন নেছা ১৯ বছর আগে মারা যান।
এদিকে মাতার মৃত্যুর ১ মাস পরই আমার মায়ের ছোট বোন (খালা) ফাতিমা আক্তার(৪০) কে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাবা। বিয়ের কয়েক বছর পর সৎ মায়ের গর্ভে দুই পুত্র সন্তান জন্ম নেয় ৷ দুই পুত্র সন্তান জন্ম নেওয়ার পর থেকেই সৎ মায়ের কুপরামর্শে পিতা আমাদেরকে দিনদিন অবহেলা করতে শুরু করে৷ তখন এক পর্যায়ে আমাদের দাদী মৃত হাকীমুন নেছা আমাদের দেখা শুনা করেন।
আমাদের অভাব আর অবহেলার স্বীকার হওয়ার পর এক পর্যায়ে আমার বড় বোন মারুফা আক্তার (১৩) বছর বয়সে বাল্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই সময় থেকে আমার দুলাভাই ফজলু করিম (৩৬) এর কাছে লালন-পালন হয়ে আসছে।
গত ৮ বছর আগে আমি খাদিজা আক্তারকে সৎ মায়ের কু-পরামর্শে কাপর সেলাই-মেশিন ধরাকে কেন্দ্র করে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। স্থানী’রা সমাজিক ভাবে আমার বাবা সোহরাপ হোসেনকে বিচারে ডাকেন এবং ভবিষ্যতে আর যেন এভাবে নির্যাতন না করেন সে বিষয়ে সর্তক করা হয়।
সেসময় আমার বাবা আমাকে আর বাসায় উঠতে দেয়নি। পরবর্তীতে বোন মারুফার কাছে আশ্রয় নিয়ে লেখাপড়া করে খাগড়াছড়ি কলেজ থেকে ২০২১ সালে মার্স্টাস সম্পূর্ণ করেছি। গত ৩ বছর ধরে আর বাাসায় যেতে পারি না। বাসায় যাওয়া হলেেই মারধর করা হয়।
গত ৭ বছর আগে আমার ছোট বোন জেসমিন আক্তার(২৪)কে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে একটি হাত বিকলাঙ্গ ও কিল-ঘুসি দিয়ে তার একটি কান বধির করে দেওয়া হলো । বাবা নামে মাত্র চিকিৎসা করেছেন , দীর্ঘদিন ধরে আমার বোন শাররীক ভাবে অসুস্থ রয়েছে। জেসমিন আক্তার গত বছর দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেছে।
আমার বাবা আমাদের অবিবাহিত ৩ বোনকে বেশ্যা, খানকি বলা সহ আরো অশ্লীল ভাষায় কথা বলে। বোনের বাসায় আশ্রয় নেওয়া বড় বোন মারুফা আক্তারকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কেন আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। ২৭ এর্প্রিল আমার বাবার সাথে আমার সৎ দুই ভাই ইস্তিজা হাসান(১৮) ও মহিবুল্লাহ ইসলাম তামীম(১৫) সহ দেশীয় অস্ত্র ঘরের দরজা কুপিয়ে দিয়েছে।
এদিকে ছোট বোন দীঘিনালা সরকারি ডিগ্রী কলেজ থেকে এ বছর এইচএচসি পরিক্ষা দিয়েছেন।
এসময় খাদিজা আক্তার আরো অভিযোগ করে বলেন, মেরুং ইউপির চংড়াছড়ি পুলিশিং কমিটিরি যুগ্ন সচিব মনির ফরাজি একাধিকার বার আমার বাবা সোহরাপ হোসেনের বিচারও করেন। আমি সহ আমার দুই অবিবাহিত বোনের কোথায় থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসলে আমার পিতা বিভিন্ন সময়ে আমাদের চরিত্র নিয়ে সমাজে কুৎসা রটিয়ে আমাদের বিবাহ ভেঙে দেয়। মেয়ে গুলো খারাপ রাতে বাসায় থাকে না পুলিশের সাথে অবৈধ সর্ম্পক জড়িয়ে আছে।
আমার বাবার এখন ইচ্ছে বাবার বাসায় কাজের ছেলেকে বিয়ে করার জন্য। বিয়েতে রাজি না হওয়া আমার ছোট বোন সুমাইয়া কে গত বছর (২০২১) সালে ২৩ জানুয়ারী গোসল খানায় ডোকে উলঙ্গ অবস্থায় চুল ধরে পিটিয়ে একটি হাত ফ্যকচার করে দেন। বিষয়টি স্থানীয়দের জানালে জানান, তোমার বাবার সাথে আমরা বিচার করতে পারবো না, আমাদের কোন কথা তিনি শুনেন নাই।
২৪ জানুয়ারী বিষয়টি দীঘিনালা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে অবগত করা হলে। আমার বাবাকে অনেক বার ডাকা হলেও তিনি কোন সারা দেন নাই। পরবর্তীতে ২৫ জানুয়ারী দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ কম্প্রেলেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে এক্সের করে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হন।
এদিকে আমার বাবা সু-কৌশলে সেই মাসের ২৮ জানুয়ারী আমাদের আশ্রয়দাতা ভগ্নিপ্রতি(দুলাভাই) ফজলুল করিম কে প্রথম আসামী করে ডাকাতি মামলা দায়ের করেন বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাসিস্ট্রেট খাগড়াছড়ি বরাবর। যাহার সিআর ৩৪-২০২১ মামলা নিয়ে পুলিশের অনেক হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে।
বোনের জামাই পড়ালেখা খরচ চালাচ্ছেন আবার এখন মামলার খরচ চালাতে হয়। আর এসবে উস্কে দিচ্ছেন স্থানীয় আমার বাবার মামা আবুল লিডার, জয়নাল লিডার, আমার ফুফুতো ভাই ফারুক মিয়া, ছগির মাস্টার। আমার বাবা আমাদের আশ্রয় ভরন-পোষন তো দূরের কথা তিনি বলেন তোরা ইউএনও কে বলেছিস নেতাদের বলেছিস তারা কি করতে পেরেছে । তোদের যা দিবো তা দিয়ে পুলিশ এবং নেতাদের মুখ বন্ধ করে রাখবো, তবুও তোদের কানাকড়িও দিবো না।
আমাদের ভগ্নিপ্রতি ফজলুল করিম গত ২৭ এর্প্রিল আমাদের জন্য আমার বাবার জায়গায় ঘর করতে গেলে আমার বাবা, সৎ ভাই ইস্তিজা হাসান(১৮) ও মহিবুল্লাহ ইসলাম তামীম(১৫) কে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমার দুলাভাইকে আঘাত করে পরবর্তীতে দীঘিনালা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আমার বাবা আমাদের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ দায়ের করেন।
এসময় চার মেয়ে বলেন, সৎ মায়ের কু-পরামর্শে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন, হয়রানি, মামলার পাশাপাশি পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক তিন বোন বর্তমানে নিরুপায়। আমাদের পিতা আমাদেরকে সন্তান হিসেবে স্বীকারও করে না। আমরা আমাদের অধিকার চাই। এ বিষয়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও নারী অধিকারে ও সচেতন ব্যক্তিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
ঘটনার সত্যতা জানতে মেরুং ইউপির পুলিশিং কমিটির যুগ্ন সচিব মনির ফরাজি জানান, সোহরাপ কতৃক মেয়েদের উপর মারধরের অভিযোগ সত্যা। আমরা সোহরাপের অনেকবার বিচার করেছি। এক মেয়ে তার গোসল খানায় গোসল করতে যাওয়া ভিতরে ডোকে উলঙ্গ অবস্থায় চুল ধরে মেয়েকে মারার অভিযোগ অভিযোগ আমরাও পেয়েছি।
৪ কন্যার সংবাদ সম্মেলন শেষে গত ১২ মে দুপুর ১২ টায় একই স্থানে সোহরাপ হোসেন (৬৫) সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তার বিরুদ্ধে আনিত ৪ কন্যার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন, বড় মেয়ে জামাতা ও স্থানীয়দের কু-পামর্শে ৃআমার মেয়েরা আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এসময় তিনি জানান তার জীবিতদশায় কোন সন্তান কে সম্পদ ভাগ দেওয়া হবে না।