সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর আজ (১৭ আগস্ট) রাত ১২ টার পর খুলে দেওয়া হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ। আজ রাতে মাছ শিকার করবে জেলেরা। আর জেলেদের জালে ধরা পড়া মাছ কাল সকালে বাজারে মিলবে
গত সাপ্তাহে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের এক সভায় মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। মাছ খুলে দেওয়ার খবরে জেলে পাড়ায় ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। জাল সেলাই, নৌকা সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষ করে মাছ শিকারের অপেক্ষায় আছেন জেলেরা।
মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার পুরান বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় জেলারা জাল সেলাই করছেন। কেউ নৌকা মেরামত করছেন। কেউ গাছের খুটি কাটছেন। কেউ বাঁশের মাচাং প্রস্তুত করছেন। কেউ জাল নৌকায় তুলছেন।
জেলে নিখিল দাশ (৪০) বলেন, সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। ১৭ তারিখ রাত বারো টার পর নদীতে জাল ফেলব। তার আগে আমরা খোপে (মাছ শিকারের স্থান) জাল নিয়ে হাজির হব।
মানিক দাশ (৫০) বলেন, অনেক আশা ভরসা নিয়ে জাল নৌকা প্রস্তুত করেছি। ভগবান সহায় হলে আশা করছি আগামী কয়েক সপ্তাহ ভাল সময় পার করতে পারব আমরা।
এদিকে মাছ শিকার খুলে দেওয়ার খবরে মৎস্য অবতরণ ঘাটে শ্রমিকদের কর্ম ব্যস্ততা বেড়েছে। মাছের ড্রাম রং করা, মার্কিং করা, বরফ গুড়ো করা মেশিন ঠিক করতে দেখা গেছে। বুধবার সকালে অবতরণ ঘাটগুলো থেকে বরফ নিতে দেখা গেছে জেলেদের।
রাঙামাটি মৎস্য অবতরণ ঘাটে মৎস্য শ্রমিক মো. মাসুদুল আলম (৩৫) বলেন, আমরা মাছের ড্রাম রেডি করে বোটে করে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছি। এ ড্রামে করে ১৮ আগস্ট সকালে মাছ আসবে। আমরা এ মাছ ঢাকা চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাব।
মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন জানায় মাছের সুষ্ঠ প্রজননের স্বার্থে প্রতি বছর মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদের সকল প্রকার মৎস্য শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এ বছর হ্রদে পানি কম হওয়ায় বন্ধকালীন সময় আরো ১৮ দিন বৃদ্ধি করা হয়।
মাছ শিকার বন্ধকালীন সময়ে জেলে পরিবারগুলোকে রেশন দেয় সরকার। প্রায় ২৫ হাজার জেলে এ রেশনের আওতায় আসে। এ বছরও রেশন পায় জেলে পরিবারগুলো।
হ্রদের মৎস্য ব্যবস্থাপনাকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রতি বছরের ন্যয় এ বছরও মাছের পোনা অবমুক্ত করে।
বিগত বছরের তুলনায় এ বছর হ্রদে পানির পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের প্রজনন সঠিকভাবে হয়েছে জানিয়েছেন বিএফডিসি রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন বন্ধকালীন সময়ে বিএফডিসির নিজস্ব হ্যাচারী থেকে এ বছর ৬০ মেট্রিক টন পোনা কাপ্তাই হ্রদে ছাড়া হয়েছে। এ ছাড়াও হালদা নদী থেকে রেনুর পোনাও ছাড়া হয়েছে হ্রদে।
তিনি বলেন এ বছর বন্ধকালীন সময়ে ৮০ শতাংশ মাছ পাচার রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বন্ধকালীন সময়ে নৌ পুলিশের সহায়তায় ৪২০টি অভিযানে জাল, নৌকা, মাছসহ উদ্ধার করে এগুলো নিলামে বিক্রি করে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫৯১ টাকা রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ উৎপাদন হয়েছে ২০ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন। অবগতর ঘাটে মাছ উঠেছে ৬৫২৩ মেট্রিক টন। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে সবেচেয়ে বেশী পাওয়া যায় কেকচি ও চাপিলা মাছ। এ ছাড়ায় রয়েছে রুই কাতলা, মৃগেল, আইড়, টেংরা মাছ।