সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে কোন রকম আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দলটির জেলা সভাপতি দীপংকর তালুকার ও সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বরের বিরুদ্ধে। এতে দলের মধ্য চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি বার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত বছর ২৪ মে। ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত সে সম্মলনে নিখিল কুমার চাকমা দীপংকর তালুকদারের বিপরীতে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতার ঘোষণা দেওয়ায় সরগরম হয় আওয়ামীলীগের রাজনীতি। এরপর থেকে লেগে আছে দলীয় কোন্দল।
এ সম্মেলনে কেন্দ্রের হয়ে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন।
কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে নিখিল কুমার প্রতিদ্বন্দীতা থেকে সরে গেলে সে সম্মেলনে বিনা ভোটে সভাপতি হন দীপংকর তালুকদার। ভোটে কামাল উদ্দিনকে পরাজিত করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মুছা মাতব্বর।
রাঙামাটি আওয়ামীলীগের একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ সম্মেলনে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন দীপংকর এবং নিখিলসহ জেলা আওয়ামীলীগকে কোন্দল ভুলে দলকে সুগঠিত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মোশারফ হোসেনের কাছে অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।
তার মধ্য প্রথম শর্ত ছিল জেলা আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন দীপংকর তালুকদার, নিখিল কুমার চাকমা, মুছা মাতব্বর এবং কামাল উদ্দিন বসে।
কিন্তু দীপংকর ও মুছা মাতব্বর বাকী দুজনকে না জানিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগের সম্মেলন শেষে নিজেদের করা পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রের দপ্তরে জমা দেয়।
এ কমিটিতে নিখিল কুমার চাকমা ও কামাল উদ্দীনকে রাখা হলেও তাদের অনুসারী ১৯ জন সিনিয়র সদস্যর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিগত কমিটি থেকে বাদ পড়াদের মধ্য রয়েছেন সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ও বিগত কমিটিতে মহিলা সম্পাদিকা ফিরোজা বেগম চিনু, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জ্যোর্তিময় চাকমা কেরল, জমির উদ্দিন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অভয় প্রকাশ চাকমা , শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক উপদ সম্পাদক আবুল কাসেম, উপ দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন সেলিম, সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ, সমরেশ দেওয়ান, অমর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, মোহাম্মদ শফি, সচিত্র চাকমা, লংগদুর রফিক তালুকদার, ত্লায়াং পাংখোয়া, জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা, নুরুল আজম চৌধুরী, চারু বিকাশ চাকমা, লুৎফর রহমান এবং সোলায়মান চৌধুরী।
বিগত কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অভয় প্রকাশ চাকমাকে জাতীয় পরিষদে এবং শিল্প ও সাহিত্য সম্পাদক আবুল কাসেমকে উপদেষ্টা পরিষদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন প্রস্তাবিত কমিটির মধ্যে বাঘাইছড়ি আওয়ামীলীগের সভাপতি, রাঙামাটি জেলা পরিষদের পর পর দুবার সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, কাউখালী আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, নানিয়াচর আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ত্রিদিব কান্তি দাশ, কাপ্তাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম আজমীরকে সহ সভাপতির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত কমিটিতে কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি শামশু দোহা চৌধুরীকে যুগ্ম সম্পাদক, কাউখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমানকে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাওয়াল উদ্দীন ও বাঘাইছড়ি আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি দানবীর চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক, বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক রেমলিয়ানা পাংখোয়াকে সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, সদস্য হিসেবে হৃদয় চাকমা, মনসুরী আলী, অভিলাষ তঞ্চঙ্গ্যা, সবির কুমার চাকমা, বাবুল দাশ বাবু, জ্ঞানেন্দু চাকমা, উদয়ন বড়ুয়া, উমেচিং মারমা, মোতাহের হোসেন, উসাংমং মারমা, আবু তৈয়ব এবং ওয়াশিংটন চাকমা, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বরের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসকাতুর রহমান, মো মামুন, মুজিবুর রহমান মুজিব এবং মাসুদ রানার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
অথচ রাঙামাটি পৌরসভার পর পর নির্বাচিত মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর নাম কোথাও রাখা হয়নি। এছাড়া মৃনাল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, এড. বিপ্লব চাকমার মত আরো অনেক নেতা আছে যারা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হবার যোগ্যতা রাখেন এমন অনেক নেতাকে সদস্য করার প্রস্তাব করা হয়নি।
জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সদস্য সাখাওয়াত হোসেন রুবেল বলেন, আমি ৪৫ বছরের অধিক সময় ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছি। ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি, যুবলীগের জেলা সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক, জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। এরপর আমার কোনদিন পদের উন্নতি হয়নি। বিপরীতে অবনতি হয়েছে। এ দায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নয়। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কারণে আমার এ অবস্থা।
৯০ সৈরশার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে কারা বরণ করেছি। আমি দলের জন্য আমার জীবন যৌবন সব দিলাম এখন ভাবী কি পেলাম।
সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের গণতন্ত্রের অভাব দেখা দিয়েছে। কোন কথাই বলা যাচ্ছে না। বললে বাদ দেওয়া থিউরী প্রয়োগ করা হচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা মো. কামাল উদ্দিন বলেন, শুনেছি কেন্দ্রে নতুন কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমি জানি না। এমন হবার কথা ছিল না। শুধু আমরা চারজন নয় বিগত কমিটির সদস্যরা এ কমিটি গঠন সম্পর্কে অবগত হবার কথা ছিল।
কথা ছিল বিগত কমিটির অনেক সদস্য মারা গেছেন তাদের শূণ্যপদে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিগত কমিটি বলবৎ থাকবে। তাছাড়া কমিটির সদস্য সংখ্যা তো বাড়ানো হয়েছে।
নতুন কমিটিতে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামীলীগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ থেকেও জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিপরীতে আওয়ামীলীগের অনেক সিনিয়র নেতাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে একবারে জুনিয়র কিছু ছেলেকে সদস্যর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জেলা আওয়ামীলীগের প্রথম সারীর এক নেতা বলেন, মুছা ও দীপংকর তালুকদার পকেট কমিটি করে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিয়েছেন এটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। কাগজপত্র আমাদের কাছে এসেছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর বলেন, আমরা এখনো পূর্নাঙ্গ কমিটি করিনি। জমাও দিই নি। যেটা শুনা যাচ্ছে সেটা সঠিক নয়।