পার্বত্য বান্দরবানে কুকি চীন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ও শান্তি এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
বৃহস্পতিবার (২২জুন) সকাল ১১ টায় পার্বত্য জেলা পরিষদের সভাকক্ষে চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা সভাপতিত্বে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ২৯মে বান্দরবান পার্বত্যা জেলা পরিষদের উদ্যোগে অরুন সারকি টাউন হলে এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা নেতৃত্বে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। যা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি নামকরন করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে আরও জানা যায়, কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখে পার্বত্য বান্দরবান জেলার শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিরসন এবং কেএনএ সদস্যদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া।
কেএনএ’র সকল সদস্যকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার এবং কেএনএ এর সাথে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সম্প্রতি সময়ে সংঘটিত ঘটনাবলীর কারণে যে সমস্ত কারণে যেসব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে সেসব এলাকায় খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা সহ পূর্নবাসনের উদ্যোগ নেয়া।
তাছাড়াও কমিটির কর্মপরিকল্পনা হিসেবে সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে এক কর্ম পরিকল্পনার প্রস্তুতি বিষয় তিনি জানান, ২৩ জুন কমিটির শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী সহ সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় সাধন করা।
২৩ জুন হতে ২৩ আগস্ট মধ্যে একটি লিঁয়াজো কমিটি গঠনের মাধ্যমে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মিদের সাথে জড়িত সদস্যদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া ও শান্তি কমিটিসহ উভয়পক্ষের নিরাপত্তা বিষয় প্রদান করবেন।
২৩ জুন হতে ২৩ আগস্ট মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অত্র কমিটির পক্ষ থেকে একটি আহবান পত্র প্রেরণ করা।
২৩ জুন সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে সাধারণ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি শীঘ্রই বন্ধ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
কর্ম পরিকল্পনায় চলমান কর্মপরিকল্পনা হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব তৈরি করা সহ এলাকার সাধারণ মানুষের নিজগৃহ ও ক্ষেত খামারে ফিরে আসার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে উদ্যেগ গ্রহণ করা।
এ সময় কমিটিতে আহবায়ক পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, মুখপাত্র জেলা পরিষদ সদস্য কাঞ্চনজয় তঞ্চগ্যা, সদস্য হিসেবে সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু, এডভোকেট বাসিংথুয়াই, সদস্য সচিব বম সোশ্যাল কাউসিন্সলের সভাপতি লালজারলম বম, বম সোশ্যাল কাউসিন্সলের ধর্মীয় গুরু ও উপদেষ্টা রেভা: পাকসিমবয়ত্লুং, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা সিংইয়ং ম্রো, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রাংলাই ম্রো, বাংলাদেশ খুমী কল্যাণ এসোসিয়শন ও জেলা পরিষদ সদস্য সিঅং খুমী, বাংলাদেশ খুমী কল্যাণ এসোসিয়েশন ও সমাজকর্মী লেলুং খুমী, বাংলাদেশ নারমা এসোসিয়েশন সভাপতি মংচিংনু মারমা, খিয়াং জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ম্রাসা খিয়াং, মানিক খিয়াং, ত্রিপুরা প্রতিনিধি কৃপা ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব কল্যাণ সংসদ সভাপতি রামবাদু ত্রিপুরা, প্রথম আলো পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও চাকমা প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা ও তঞ্চগ্যা প্রতিনিধি সমকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি উজ্জল তঞ্চগ্যা ১৮ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।
কমিটি মুখপাত্র ও জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যাঁ বলেন, সম্প্রতি সময়ে কেএনএফ ন্যাশনাল ফ্রন্ট তাদের সামরিক শাখা কুকেচিন আর্মি ধারা বান্দরবানে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তাদের তৎপরতা কারণে দিনদিন জনজীবনের হুমকি মুখে পড়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃংখলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে সেনাসদস্যসহ নিরীহ মানুষ পাশাপাশি কুকেচিন সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছে। জীবন হারানো খেলা এখনও চলমান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জানা মতে, নিজেদের জন্য বিশেষ কিছু অঞ্চল প্রতিষ্ঠা দাবিতে কিছু বিপথগামী তরুণ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। তাদের অনুযায়ী বম, পাংখ, লুসাই, খেয়াং, খুমী ও ম্রো জনজাতি। তারা আলোচনা পথে না গিয়ে সরাসরি অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার সমস্যাটি সংঘাতের রূপ নিচ্ছে। আমরা এই অবস্থা পরিবর্তন চাই। সেজন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মাধ্যস্থতা ভূমিকা নিয়ে বম সোশ্যাল কাউন্সিল এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে শান্তির প্রতিষ্ঠা জন্য এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের পক্ষ থেকেই প্রাথমিক যোগাযোগ ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ইতিপূর্বে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে দুই যুগ ধরে যে সংঘাত সৃষ্টি, সেটি আলাপ আলোচনা মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হয়েছে। খুব শীঘ্রই পাহাড়ে শান্তির প্রতিষ্ঠা লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করবো। এবং এই উদ্যোগকে আপনাদের কাছ থেকে সর্বাধিক সহযোগিতা কামনা করছি।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আহবায়ক ক্যশৈহ্লা বলেন, আমরা কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে আবারো বৈঠকের আয়োজন করবো। পরবর্তীতে আরো আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে