বান্দরবানে টানা ৪দিনের কখনো হালকা, কখনো মাঝারি থেমে থেমে বৃষ্টিপাতে কারণে সাঙ্গু এবং মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফলে বান্দরবানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। রোববার বান্দরবানে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকদিন টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নদীর পানি বিভিন্ন ঝিড়ি দিয়ে প্রবেশ করার বান্দরবান শহরের মেম্বার পাড়া, আর্মি পাড়া, বাস ট্যান্ড, বালাঘাটা, কালাঘাটা, ইসলাম পুর, মধ্যমপাড়া, উজানী পাড়া, ক্যচিংঘাটাসহ সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ কয়েকটি নিম্ন অঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়ে দোকান ও বসতবাড়িতে কোমড় পানি সমান উঠেছে।
গুড়ি গুড়ি আর মাঝে মাঝে ভারি বৃষ্টির উপেক্ষা করে তাদের মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মধ্যম পাড়া মারমা বাজার এলাকা বন্যা দুর্গতরা উঁচু স্থানে বাজার সেট আবার কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে রাস্তার এক কোনায় প্লাস্টিকের ঝুপড়ি টাঙ্গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
আর্মি পাড়া বাসিন্দা সালমা ও রিয়াজ বলেন, গতকাল থেকে ভয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন রকমে রাত কেটেছে। তাই সবকিছু আগেভাগে গুছিয়ে রেখে ছিলাম। আজ সকাল থেকে একনাগারে বৃষ্টি শুরু হলে পানি বেড়ে ঘরে ঢুকে পড়েছে। এখন আমরা ৭টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। এদিকে বান্দরবান সদরে বালাঘাটা ব্রিগেড সংলগ্ন এলাকা সড়কে পানি জমে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি হয়েছে।
এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই রোড়ে চলাচল মানুষকে। বিশেষ করে ছুটির পর কলেজ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা কোমর পানিতে হেঁটে নিজ গন্তব্যে দিকে পৌঁছাতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে গণপরিবহনগুলো পানিতে আটকা পড়ে। এতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসে।
শিক্ষার্থীর রমেশ চাকমা, হাবিবসহ কয়েজন বলেন, সকালে ১০টা পর থেকে যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে পানি নিচে সড়ক ডুবে গেছে। এখন সড়কের কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। তাই বাধ্য হয়ে ভিজে ভিজে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে।
অপরদিকে বান্দরবানে পাহাড় ধসে ছয়জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড করিমার ঝিরিতে পাহাড় ধসে একিই পরিবারের শিশুসহ ৪ জন এবং বান্দরবান পৌরসভা ২জন আহত হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জসিম উদ্দিনের মাটির বাড়িতে দুপুর ১২ টার সময় পাহাড় ধসে পড়ে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ঘরে থাকা তার স্ত্রী রোকসানা (২৪) তার মেয়ে আনিকা (৮), জেসমিন (৬), ছেলে শাহাজালাল (দেড় বছর) আহত হয়। এবং বান্দরবানে শহরে কালা ঘাটা ও বীরবাহাদুর নগর এলাকার বিকেলে পাহাড় ধসে ঘটনা ঘটে। এতে ৬নং ওয়ার্ড বীর বাহাদুর নগর এলাকা রুমি আক্তার (২৮) এবং কালাঘাটা ৩নং ওয়ার্ড এলাকা মা. রিদুয়ান (১৯) গুরুত্বর আহত হয়।
আহতরা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের বারবার মাইকিং ও সরিয়ে নিতে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
অপরদিকে, পাহাড়ি ঢলে আলীকদম লামা ফাঁসিয়াখালী সড়কের কয়েকটি স্থানে পানিতে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় আর কয়েকটি স্থানে গাছপালা ভেঙ্গে আপাতত যোগাযোগ কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি উপজেলা টানা কয়েকদিন বৃষ্টিপাতে কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বান্দরবান আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৯ মিলিমিটার ও গত চার দিনে জেলায় প্রায় সাড়ে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও পাঁচ-ছয় দিন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় পাহাড় ধসেরও সম্ভাবনা আছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় পাহাড় ধসে নাইক্ষ্যংছড়িতে চারজন ও বান্দরবান সদর উপজেলায় দু’জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। তারা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি আরও বলেন, জেলায় ১৯২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় নেয়া মানুষদের জন্য প্রশাসন পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বর্তমানে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তাদেরকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।