মামুন হত্যাকান্ড, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে বাড়ি ঘরে ও দোকানপাটে আগুন দিলো কারা?
এঘটনার সূত্রপাত কোথা হতে?
স্থানীয়রা জানান, আমরা যা শুনলাম ও স্যোসাল মিডিয়ায় যা দেখলাম ঘটনার শুরু থেকে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে কতিপয় কিছু পাহাড়ি যুবক ও যুবতিরা। উপজাতি ভাষায় তারা বলেন, ঘির পাকড়াও চতুর্থ দিক থেকে বাঙালিরা পাহাড়িদের বাড়ি ঘর ঘিরে ফেলেছে। উত্তেজনা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা পরিবেশটাকে বিপন্ন-বিস্ময়ের দিকে ঢেলে দিলে সংঘর্ষে রুপ নেয়। পাহাড়ি বাঙালি সংঘর্ষে উভয়ের মধ্যেই ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পাহাড়ের চিত্র সকলের জানা আছে। পাহাড়ে কিছু হতে না হতে উদ্ভব পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পাহাড়িরা। পরে সেটাকে সম্প্রদায়িক রুপ দিয়ে বিশ্ববাসীকে দেখায় তারা নির্যাতিত। আমরা বরকল গণহত্যা, পাকুয়াখালী ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যাসহ বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টিকারী কারা।
ঘটনার সূত্রপাত-খাগড়াছড়িতে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময়ে অগ্নিসংযোগে পুড়ে গেছে পাহাড়ি বাঙালির ৩০টি ঘর বাড়ি ও দোকান। বিষয়টি নিয়ে এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে দীঘিনালায়। গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সারা দিন এসব ঘটনা ঘটার পর রাতেও উপজেলার কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্তক অবস্থানে আছে। এর মধ্যেও কয়েকটি স্থানে যাতায়াত করতে গিয়ে রাতে দুর্বৃত্তদের বাধার মুখে পড়েছেন কেউ কেউ।
আবার এসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বড় ধরনের কোনও সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে পানছড়ির কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে পানছড়ি কলেজ গেট এলাকায় টহল দিতে গেলে দুর্বৃত্তদের বাঁধার মুখে পড়ে সেনাবাহিনীর টহল দল।
এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করে অজ্ঞাত যুবকরা পাহাড়ি বাসিন্দাদের কলেজ গেট এলাকায় জড়ো হওয়ার জন্য উস্কানি দিয়ে আহ্বান জানায়। পাশাপাশি কলেজ গেট এলাকার পাশে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের গেট ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তদের আরেক দল। দুর্বৃত্তরা নিজেদের পাহাড়ি দাবি করে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাহাড়ি কয়েকজন বাসিন্দা।
রাত ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের নারাণখাইয়া এলাকায় গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে জানিয়েছেন।
দীঘিনালার কলেজ গেট এলাকার বাসিন্দা সুনয়ন চাকমা বলেন, দীঘিনালায় আমরা আতঙ্কে আছি। রাতে পাহাড়ি এই এলাকায় কী হচ্ছে, বা প্রকৃত ঘটনা কী ঘটছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
দীঘিনালার লারমা স্কয়ার এলাকা সংলগ্ন বোয়ালখালী বাজারের ব্যবসায়ি শরীফ হোসেন বলেন, আমরা সবাই আতঙ্কে আছি। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। কেন আতঙ্কে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে, স্থানীয়দের মারধর করছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তারা। এ জন্যই আতঙ্কে আছি। তারা পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে এঘটনা ঘটিয়েছে।
বোয়ালখালী বাজারের আরেক ব্যবসায়ি দিদারুল ইসলাম বলেন, কোনও কারণ ছাড়াই একটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ছাত্রদের ওপর হামলা চালালে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেওয়া হয়।এখন পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা যাকে যেখানে পাচ্ছে মারধর করছে। তবে সাধারণ পাহাড়িরা এসব ঘটনার সাথে জড়িত নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি মো. লোকমান হোসেন বলেন, এসব ঘটনার জন্য পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়ী। চোর সন্দেহে মামুনের হাত পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছিল পাহাড়ি কয়েকজন যুবক।
মামুন হত্যার ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে উস্কানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তারা।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে সেখানেও হামলা করেছে পাহাড়িরা। হামলায় অন্ততঃ ১০ জন বাঙালি ছাত্র আহত হয়েছে। এখন নিজেরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, অন্যায় ভাবে স্থানীয় মানুষকে হয়রানি করছে। এসব বন্ধ করা জরুরি।
জেলার বাঙালি পরিষদের নেতা আবদুল মজিদ বলেন,আমাদের মেরে ফেললে আমরা প্রতিবাদও করতে পারবো না। এ কোন সমাজে বসবাস করছি? পাহাড়িরা এ কের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাবে আর আমরা বসে বসে খেলা দেখবো।
দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হক বলেন, অবশ্যই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলার মুখপাত্র নিরন চাকমা বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি আমরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামুনকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন দীঘিনালা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সমাবেশের একপর্যায়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে পাহাড়ি কিছু দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুড়েছে তারা। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে উপজেলার লারমা স্কয়ার সংলগ্ন পাহাড়ি ও বাঙালিদের মিশ্রিত দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় পাহাড়ি দুর্বৃত্তরা।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো.আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘পাহাড়িদের সঙ্গে বাঙালিদের উসকে দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল একটি পক্ষ। সেখান থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়িদের অন্তত ৩০টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫টার দিকে দীঘিনালা উপজেলা সদরের লারমা স্কয়ার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গত বুধবার সকালে জেলা শহরে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মামুন নামের এক বাঙালি যুবক নিহত হওয়ার পর এ হামলা চালানো হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালা উপজেলা সদর চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে একদল বাঙালি ছাত্র জনতার। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই মিছিল থেকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন।
এ সময় কিছু বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় বলে জানান সেখানে উপস্থিত থাকা ইনস্তা চাকমা।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে জানিয়ে বলেন,’সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টহল চলছে।’
বর্তমানে পাহাড়ের শান্তি ফিরিয়ে আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ’ মন্তব্য করে পলাশ বলেন, ‘আমরা জেলায় শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
অপরদিকে শুক্রবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে খাগড়াছড়ির মধুপুর ও দীঘিনালায় হামলা ঘরবাড়ি-দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও যথাযথ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন রাঙামাটি সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন এর পাহাড়ি জনতা।