রাঙামাটি জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ২৯ মে ২০২২ সালে ৪৬২ পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২দফা ইন্টারভিউ কার্ড ছেড়েও শিক্ষক নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন জেলা পরিষদ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পুরো জেলায় প্রধান শিক্ষক ৩৭৩ জনের পদ খালী ও সহকারী শিক্ষক ৬০২ জনের পদ খালী পড়ে আছে। কিন্তু নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এই সব নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আবেদনকারী অনেকেরই বয়স চলে যাচ্ছে তাই তারা চাকরি নিয়ে চিন্তিত। অন্তর্বর্তীকালিন পরিষদ দায়িত্ব নিয়েছে গত ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে। প্রায় ৫মাস হয়ে গেল এব্যাপারে তাদের যেনো কোন মাথাব্যথা নেই। জেলার ১০উপজেলায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে পড়ালেখার মান বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে।
সহকারী শিক্ষক পদে প্রার্থী মোঃ সৈয়দ আহাম্মদ শাকিল বলেন, ২০২২ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির জন্য আবেদন করি। প্রায় ৪ বছর পার হয়ে গেল নিয়োগের ব্যাপারে কোন সুরাহ দিচ্ছে না পার্বত্য জেলা পরিষদ। এদিকে যারা আবেদন করছে তাদের মধ্যে অনেকের বয়স চলে যাচ্ছে। অনেকে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু জেলা পরিষদের মাষ্টারী চাকরির কোন খবর নেই। আর কত দিন লাগবে তাও জানতে পারচ্ছি না। তাই অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের কাছে আমাদের দাবি রাঙামাটি জেলা পরিষদ যেন দ্রুত এই নিয়োগ শেষ করে দেন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বিগত ১৬বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, নিখিল কুমার চাকমা ও অংসুইপ্রু চৌধুরী চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০২২ সালের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত রাখা হয়েছে। এই তিন চেয়ারম্যানের আমলে চাকরি বাণিজ্য ও টেন্ডার বাণিজ্য হয়েছে চরমে। তৎকালিন সময়ে নেতাকর্মীরা চরম দুর্নীতি করেছে। ভুয়া প্রকল্পের ছড়াছড়ি ও সর্বকালের সেরা অনিয়ম দুর্নীতি করা হয়েছে। সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা, ভূষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও বরকল উপজেলার যুবলীগ নেতা সদ্য কারাবরণকারী মামুনুর রশিদ মামুনসহ অনেকই দুর্নীতির দায়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিশিকেস শীল বলেন, ২০২২ সালের শিক্ষক নিয়োগে সহকারী শিক্ষক পদে ৬হাজার ২৯১টি আবেদন পড়েছিল। তার মধ্যে ৪ হাজার ৭৭টি ইন্টারভিউ ইস্যু করা হয়েছে। বাকি ২হাজার ২১৪টি আবেদন বিভিন্ন কারনে হয়তো বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ ব্যাপারে নিয়োগ কর্তা হলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস শুধুমাত্র অর্ডার কেরি করেন শুধু। নিয়োগ, বদলী ও স্থগিত এসব কার্যক্রম পরিচালনা করেন জেলা পরিষদ। তবে এ জেলার শিক্ষার মান্নোয়নে এই জটিলতা দূর করে শিক্ষক নিয়োগ করা হলে সকলের জন্যই মঙ্গল হবে।
জেলা পরিষদ সদস্য শিক্ষা বিভাগের আহবায়ক বৈশাখী চাকমা বলেন, আগের পরিষদ যে ৪৬২জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার ও ইন্টাভিউ কার্ড দিয়েছিল। ওই পরিষদ তা সম্পূর্ণ করে যেতে পারেনি। শিক্ষক নিয়োগে বয়সের জটিলতায় একজন প্রার্থী বাদী হয়ে মামলা করার কারনে সে নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। এই অন্তর্বর্তীকালিন পরিষদ শিক্ষক নিয়োগ ব্যাপারে মামলার বাদীর সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করছে। শিক্ষক নিয়োগে ৪০বছর বয়স নিয়ে যে জটিলতা তা নিরসন না হলে শিক্ষক নিয়োগে এই পরিষদ ও অগ্রসর হতে পারবে না। তবে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে।