হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির বদলে টাকার বিনিময়ে আরেকজন সাজা খাটার কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ২০১৮ সাল থেকে তিনি কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা খাটছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসল আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে গ্রেপ্তার করে র্যাব আজ সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানিয়েছে। ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার মাহফুজুর রহমান।
তিনি জানান, ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার কদমতলীতে হুমায়ুন কবির টিটু হত্যার ঘটনায় সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত সোহাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ফুফাতো ভাই মো. হোসেন ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি নিজেকে সোহাগ পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আবেদন খারিজ করে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।
২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর কদমতলীর আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে হুমায়ুন কবির টিটুর মাথায় গুলি করা হয়। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সেই ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কদমতলী থানায় সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, মামুন ও ছোট সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জনকে মামলায় আসামি করা হয়।
মামলার প্রধান আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ ২২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন। ২০১৪ সালের ১৬ মে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপন করেন।
সোহাগের উনুপস্থিতিতে ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর আদালত তার যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেন।
র্যাব জানায়, আদালত রায় দেওয়ার পর হোসেনকে নকল সোহাগ সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলেন বড় সোহাগ। এর জন্য সোহাগ তাকে মাসিক ৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আত্মসমর্পণের পর আদালত হোসেনকে কারাগারে পাঠান।
র্যাব আরও জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে একজন সাংবাদিক টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজন সাজা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। প্রতিবেদনে আসল আসামির পরিবর্তে অন্যজনের সাজা খাটার বিষয়টি উঠে আসে। পরে সংশ্লিষ্ট থানার প্রতিবেদনেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। এরই মধ্যে বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪, প্রকৃত আসামীর (সোহাগ) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরোয়ানা জারি হওয়ার খবর পেয়ে সোহাগ দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করেন। তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করেন। বিদেশ ভ্রমণে করোনার টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় গতকাল তিনি দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে মিটফোর্ড হাসপাতাল আসেন।
প্রকৃত আসামির টিকা নিতে আসার খবর পেয়ে র্যাব-১০ এর একটি টিম হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রকৃত আসামি সোহাগকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুইটি হত্যা মামলা, দুইটি অস্ত্র মামলা ও ছয়টি মাদক মামলাসহ সর্বমোট ১০টি মামলা রয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করা হবে বলে র্যাব জানায়।