খাগড়াছড়িতে ফের ১৪৪ ধারা জারি, আতংক ও থমথমে পরিস্থিতি পরিবেশ বিরাজ করছে রাঙামাটি শহরে। খাগড়াছড়িতে শিক্ষক পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং দাওয়া পাল্টা দাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফের সংঘাত ও সংঘর্ষ বেঁধেছে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে। খাগড়াছড়ি জেলা শহরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসক ১৪৪ ধারা জারি করে।
১ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকাল ৩টা ১৫মিনিটে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয় বলে ‘পাহাড়ের খবরকে’ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। তিনি জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এখন থেকে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গোটা শহরে টহল দেবে।
নিহত শিক্ষক হলেন, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইন্সট্রাক্টর (বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স) ও বিভাগীয় প্রধান আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা। একই প্রতিষ্ঠানের পাহাড়ি ছাত্রদের বিরুদ্ধে শিক্ষক সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) রিপল বাপ্পী চাকমা।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই শিক্ষক সোহেল রানাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীরা। বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ওই ছাত্রী আদালতে এসে পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে শিক্ষক সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগদানের পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে ছাত্রী যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিল। আজও ত্রিপুরার এক ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে বেধম মারধর করে হত্যা। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গোটা জাতি দেখছে।
এদিকে, শিক্ষক সোহেল রানাকে হত্যার প্রতিবাদে পাহাড়ি ও বাঙালি ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। ভাংচুর হয়েছে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র। আহত হয়েছেন ২০-২২ জন। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করলেও শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
অন্যদিকে সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির নয়নপুর বাঙালিদের বসতবাড়িতে আগুন দিয়েছে দুবৃত্তরা। এমন দাবি করেছেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে চোর সন্দেহে খাগড়াছড়িতে মামুন (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর অশান্ত হয়ে ওঠে গোটা পাহাড়। যার জেরে পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলায় (খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি) ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
এদিকে খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার জেরে রাঙামাটিতে সম্প্রদায়িক সহিংসতার আশংকায় শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র বনরুপায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। শহর জুড়েই নিরাপত্তা টহল জোরদার করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। গতবারের মত খাগড়াছড়ি দীঘিনালার ঘটনা যেন রাঙামাটিতে ছড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষে পাহাড়ি ও বাঙালি নেতারা লোকজনদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। প্রশাসন ও পাহাড়ি বাঙালি রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ গুজবে কান না দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে।