বুধবার, মার্চ ২২News That Matters

পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে ব্যবস্থা

শেয়ার করুন:

অধ্যাপক ডা. সেতাবুর রহমান।

আজ ৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ক্যানসার দিবস। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ নানা সংস্থা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। মানুষকে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন করতেই মূলত এসব নানা আয়োজন। আসলে সব ধরনের ক্যানসার সম্পর্কেই প্রত্যেক মানুষের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ক্যানসার এমন এক মরণব্যাধি, যথাসময়ে রোগটি শনাক্ত করতে না পারলে এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব না হলে রোগী মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে যান।

গবেষকদের তথ্যমতে, মানবদেহে দুশো ধরনের ক্যানসার আক্রমণ করতে পারে এবং প্রতিটি ধরনই মারাত্মক। তবে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ পাকস্থলী বা স্টমাক ক্যানসার। নারীদের তুলনায় পুরুষ বেশি আক্রান্ত হয় এ ক্যানসারে। দুঃখজনক ব্যাপার হলেও সত্য, বয়স্ক মানুষের এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলেও আমাদের দেশে অল্প বয়সী মানুষের অনেকেই পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

রোগের কারণ : পারিবারিকভাবে হতে পারে পাকস্থলীর ক্যানসার। তবে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিক ও হ্যালিকোব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন এ ক্যানসার হওয়ার অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও যারা সল্টেড ফুড, সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকি বেশি বেশি খান, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি বেশি খান, ফ্রেস ফলমূল কম খেয়ে থাকেন, স্থূলতা অর্থাৎ ওজন অতিরিক্ত বেশি, যারা শারীরিক পরিশ্রম খুবই কম করে থাকেন, রাবার ও কয়লা ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন যারা, তাদের এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই হতে পারে।

লক্ষণ : প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। সাধারণ গ্যাস্ট্রিক-আলসারের সঙ্গে লক্ষণ খুব বেশি পার্থক্য করা সম্ভব হয় না। হঠাৎ করে উপরের পেটে ব্যথা, শুকিয়ে যাওয়া, জ্বালাপোড়া, পেট ফেঁপে থাকা, খাদ্যগ্রহণে তেমন আগ্রহ না থাকা, বমিভাব বা বমি হতে থাকা, খাবার উপরে উঠে আসা, মুখে লালা জমা যাওয়া- এসব পাকস্থলী ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। এ ছাড়া পেটে চাকা, পানি আসা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্ত বমি এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা : কেবল এন্ড্রোস্কপি পরীক্ষার মাধ্যমেই এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এছাড়া রোগটির স্টেজ নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান ও অন্যান্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসা : সার্জারি এ রোগের প্রধান ও প্রাইমারি চিকিৎসা। এ ছাড়া এই ক্যানসারের সহযোগী চিকিৎসা হলো কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপি। তবে স্টেজ অনুযায়ী অপারেশনের আগে ও পরে এসব থেরাপি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়ে থাকে। মনে রাখা প্রয়োজন, যে কোনো ধরনের ক্যানসারই প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা সম্ভব হলে রোগটি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগটি ততদিনে জটিল থেকে আরও জটিলতর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ফলে রোগমুক্তি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা : যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উত্তম। অর্থাৎ এ জন্য আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। যেমন- অর্গানিক শাকসবজি, টাটকা ফলমূল বেশি বেশি খেতে হবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। শারিরিক ওজন কমাতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দিতে হবে। অল্প বয়সে সমস্যা দেখা দিলে এন্ড্রোস্কপিক স্ক্রিনিং করতে হবে। চিকিৎসক রোগের অবস্থান বুঝবেন। শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা চালিয়ে গেলে ক্যানসার থেকে নিরাময় সম্ভব।

লেখক : ব্রেস্ট, খাদ্যনালি ও কলোরেক্টাল সার্জন সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, এনআইসিআরএইচ

চেম্বার : ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল লি., ২৬/২ দারুস সালাম রোড, মিরপুর-১, ঢাকা। ০১৬১১৪৪৩৩৪৫; ০১৩০১২৫৪৯২৪

-দৈনিক আমাদের সময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *