রাঙামাটিতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতার দাবির মুখে অপসারিত না হওয়ায় ভাঙা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য। জুলাই বিপ্লবের দীর্ঘ ৯ মাস পর শুক্রবার বিকালে এই ঘটনার মাধ্যমে ছাত্র জনতা তাদের ঘোষিত আলটিমেটাম কার্যকর করে। এর আগে ৫ আগষ্ট পতিত আওয়ামী লীগের পতন হলে এই ভাষ্কর্যটি ভাঙ্গার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন ছাত্র-জনতা। পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ভাষ্কর্যটি অপসারণের দাবি তোলা হয়।
আজ (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাঙামাটির ভেদভেদি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে রাঙামাটি উপজেলা পরিষদ ও সেনা ক্যাম্পের পাশে স্থাপিত ভাষ্কর্যের সামনে প্রধান সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন ছাত্র জনতা। পরে বিকাল ৫টার দিকে স্লোগানের মধ্যে হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে শুরু হয় ভাঙচুর। প্রতীকীভাবে ‘ফ্যাসিবাদের চিহ্ন’ হিসেবে চিহ্নিত শেখ মুজিবের ভাষ্কর্যে আঘাত হানেন তারা। প্রথম দিকে হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে ভাঙা শুরু করলেও পরে যোগ করা হয় ড্রীল মেশিন।
এর আগে গত বুধবার, জেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জনতা। জানিয়ে দেন, সময়মতো ভাষ্কর্য না সরালে নিজেরাই ব্যবস্থা নেবেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে সে প্রতিশ্রুতির প্রতিফল না ঘটায়, তারা আজ চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়। এবিষয়ে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব ভাস্কর্য ছিল পুঁজিবাদী চিন্তা-চেতনার প্রতীক। তাদের ভাষায়, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী এসব প্রতীক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আদর্শের সঙ্গে যায় না। তাই এগুলো সরানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পূর্বে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। পতিত সরকারের আমলে টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। এই কর্মে উদ্যোগী ভূমিকা ছিল স্থানীয় প্রশাসনেরও। অনেক সংস্থা নিজ উদ্যোগেও এগুলো তৈরি ও স্থাপন করে। তার ধারাবাহিকতায় তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মাণ করে। জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ও এর আশেপাশে স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩১ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ১২ ফুট প্রস্থের ভাস্কর্যটি নির্মাণে প্রথম ধাপে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ঘঁষামাজা, ফিনিশিং, রেলিং, টাইলস, প্রতিবন্ধক দেওয়ালসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ আরো দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে ভাস্কর্যটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।