প্রকৃতির রানী বলা হয় রাঙ্গামাটিকে। প্রকৃতির সৌন্দর্য ঘেরা বিলাইছড়ি উপজেলাও। এই উপজেলার মোট আয়তন ৭৪৫.১২ বর্গকিলোমিটার মোট জনসংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজারের উপরে।ভারত ও ময়ানমার দুই দেশের সীমানা রয়েছে।রয়েছে ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত সড়কও। রয়েছে বিভিন্ন সম্প্রাদায়ের বসবাস। বাঙালি ছাড়াও রয়েছে তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা, মার্মা, ত্রিপুরা,বম,পাংখোয়া সম্প্রদায়। সামাজিক সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আচরন, ভিন্ন ভিন্ন পোশাক- পরিচ্ছদ, খাবার- দাবারে রয়েছে ভিন্নতা। তাদের বসবাস পাহাড়ের নীচে,নদীর ধারে, ছড়ার পারে কিংবা সুউচ্চ পাহাড়ে। এই উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য ঝর্ণাও। এজন্য বিলাইছড়ি উপজেলা তো নয় যেন এক মায়াবী স্বর্গ। তাই উপজেলায় আসতে লেখা আছে- ঝর্ণার দেশে চলো। তাই দেখতে জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন এই উপজেলার ঝর্ণা এবং প্রকৃতি। প্রকৃতি প্রেমীদের দিন দিন আকৃষ্ট হয়ে উঠছে এই ঝর্ণাগুলোতে। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসেন ঝর্ণা দেখতে। ঝর্ণাগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে নতুন রিসোর্ট, হোটেল – মোটেলও। হয়ে ওঠেছে সম্ভাবনাময় বিলাইছড়ি উপজেলা। তাই ঈদের এই লম্বা ছুটিতে ঘুরে আসুন নিঃসন্দেহে।
উপজেলার প্রকৃতি যেন আপনাকে ডাকছে, বলছে দেখ আমাকে কেমন লাগছে,মানিয়েছে তো বেশ। শীত কালে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে কুয়াশা,বর্ষাকালে নদীর স্রোত আর নদী ভরা যৌবন, গ্রীষ্ম কালে হয়ে থাকে ফলের রাজ্যে, ঋতুরাজ বসন্তকালে কোকিলের ডাক আর গাছে ফুল ফুঁটিয়ে যেন উপজেলাকে নববধূরুপে সাজিয়ে তোলে,শরৎকালে শুভ্র মেঘ আর নীল আকাশ সবে যেন তোমাদের সঙ্গে মিশে গেছে । এখানকার হাল-বিল,নদ-নদী,পাহাড়, লেক,ঝর্ণা সবকিছু যেন অপরুপ সৌন্দর্য। এখানে যারা বসবাস করে সবাই অতিথি পরায়ণ । কর্ণফুলি লেক থেকেই উৎপত্তি হয়েছে ৫ টি শাখা নদী তার মধ্যে ১ টি নদী হলো রাইংখ্যং নদী।সেই নদীর উৎস হচ্ছে সু-উচ্চ পাহাড়ে উৎপত্তি হয়েছে অসংখ্য ঝিঁড়ি,ঝর্ণা, এবং ছড়া। রয়েছে শত শত ছোট-বড় অনেক ঝর্ণা।তেমনিভাবে রয়েছে অনেক বড় বড় ঝর্ণাও।যেমন- নকাটাছড়া ঝর্ণা'”স্বর্গপুর ঝর্ণা, গাছকাটাছড়া ঝর্ণা,মুপ্যাছড়া ঝর্ণা এবং ধুপপানি ঝর্ণা- সহ অসংখ্য মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা । এজন্য ঝর্ণার জন্য খ্যাতও বলা হয় এই উপজেলাকে।স্বানীয় এবং জন প্রতিনিধিরা জানান- পরিবেশ বজায় রাখতে পাহাড়ে মানুষের বসবাস এবং পানির উৎস এবং ঝর্ণাগুলো টিকিয়ে রাখতে ঐ এলাকার পাশে জুম চাষ ও গাছপালা কাটা হয় না।
প্রায় ঝর্ণাগুলো ১০০ ও ২০০ ফুট উপর হতে রিমঝিম রিমঝিম করে সবসময় ফোয়ারার মতো পাথরের ভেতর থেকে পানি পড়তে থাকে। ভিজলে মূহুর্তের মধ্যেই শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়।চৈত্র মাসে খরা রোদেও কোন রকম পৌঁছাতে পারলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়,সব ক্লান্তি দুর হয়ে যায় ঝর্ণার পানি পরশ করলে।গ্রীষ্মকালেও তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হয়। তাই বাংলাদেশে শুভলং, হিমছড়ি, সীতাকুণ্ড এবং মাধবকুণ্ডসহ দেশের অন্যান্য ঝর্ণার চেয়েও বেশি সুন্দর বলে থাকেন অনেক ভ্রমণ পিপাসুরা। হার মানাবে দেশের বেশ বড় বড় ঝর্ণাকে। না দেখলে তো অবশ্যই মিস করবেন। ধুপপানি ঝর্ণাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা মনে করে প্রকৃতি প্রেমীরা। কয়েকদিন আগে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হওয়ায় নতুনভাবে জেগে উঠেছে এই ঝর্ণাগুলো।সেজেছ নতুন রুপে। ছুটির দিনে পর্যটকদের মনোমুগ্ধকর করতে।
ঝর্ণা রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিঃ- বর্তমানে ঐসব এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি করে “ঝর্ণা রক্ষাণাবেক্ষণ কমিটি” গঠন করা হয়েছে। তাই ঝর্ণাকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি কমিটি গঠন করে পর্যটক আসলে তাদেরকে সহযোগিতা দিয়ে থাকে স্থানীয়রা।রয়েছে গাইডারও।
অবস্থানঃ-গাছকাটাছড়া ঝর্ণা:- উপজেলায় ১ নং সদর ইউনিয়নে ৩ নং ওয়ার্ডের গাছকাটা ছড়া দোসরী পাড়ায় অবস্থিত। উপজেলা সদর হতে ১ দিনে আসা- যাওয়া করা যাবে।
ধুপপানি ঝর্ণাঃ- ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়নে-যেতে হলে উলুছড়ি নতুবা ওড়াছড়ি কিংবা ধুপশীল অথবা সীমান্ত সড়ক পথে হয়ে যেতে হবে। সদর হতে খুব ভোরে রওনা হলে বিকালে ফিরা যাবে। মূপ্যা ছড়া ও নকাটাছড়া ঝর্ণা:- কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে ৯ নং ওয়ার্ডে। যেতে হলে নলছি হয়ে যেতে হবে। উপজেলার সবচেয়ে কাছের ঝঁণা।
স্বর্গপুর ঝর্ণাঃ- দীঘলছড়ি মৌন পাড়ায় অবস্থিত। সদর হতে মূল সড়ক দিয়ে ধূপ্যাচর, দীঘলছড়ি হয়ে যাওয়া হয়। দিনের ভিতরে ফিরা যাবে। এই ঝর্ণাটি ৭ দিক থেকে পানি পড়ে।সামনে রয়েছে একটি সচ্ছ পনির লেক। নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। যা ন্যাচারাল এ্যাকুরিয়াম বলে থাকেন অনেকে। এজন্য পূর্বে দায়িত্বরত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মিজানুর রহমান নামকরণ করেছেন স্বর্গপুর।
কিভাবে আসবেনঃ–ঢাকা হতে ইউনিক, ডলফিন, ঈগল, শ্যামলী, হানিফ এবং বিআরটিসি কোচে করে রাঙ্গামাটির তবল ছড়ি লঞ্চ ঘাট হতে সকাল ৭:০০ টা বেলা ২ টা নতুবা রিজার্ভ বাজার মদজিদ ঘাট হতে বেলা ৩ টায় বিলাইছড়ির পথে লোকেল লঞ্চ পাওয়া যাবে।অন্যদিকে ঢাকা হতে সরাসরি কাপ্তাই, সেখান থেকে বিলাইছড়িতে ইঞ্জিন চালিত লোকেল বোটে আসা যাবে। জন প্রতি ১০০ -১৫০ টাকা। তবে উল্লেখ্য যে, কাপ্তাই হয়ে আসলে লেকের বা হ্রদের পুরোদৃশ্য কোনভাবে উপভোগ করা যাবে না। উপভোগ করতে হলে রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার ঘাট নতুবা উন্নয়ন বোর্ডের ঘাট হয়ে আসলে পুরো দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। সেজন্য যোগাযোগ করতে পারেন বিলাইছড়ি বোট মালিক সমিতির সঙ্গে। যার কনটাক্ট নাম্বার – ০১৫৫৯-৭১৪৮৯৬। যোগাযোগ ও দরকষাকষির মাধ্যমে লেকের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন মনের আনন্দে ছন্দে।