জনি ভট্টাচার্য (৩৩)। হিসাব বিজ্ঞানে সম্মান স্নাতকোত্তর করেছেন। শিক্ষা জীবনে কোনবার দ্বিতীয় হননি জনি । ১ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে ছিলেন প্রথম। বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি এবং হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে সম্মান ও স্নাতকোত্তর সব পরীক্ষায় অর্জন করেছেন প্রথম শ্রেণী। চাকুরী পরীক্ষা দিতে গিয়ে ১০ বারের অধিক মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু চাকুরী হয়নি কোনবার।
মেধাবী এ প্রতিবন্ধী নারীর দিন কাটে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী পোস্ট কলোনীর ভাড়া ঘরের চার দেওয়ালের ভিতরে।
হুইল চেয়ার একমাত্র ভরসা জনির। জনিকে সার্বক্ষনিক দেখাশুনা করতে হয়।কারণ সাহায্য ছাড়া কোন কাজই করতে পারে না জনি। তাকে দেখাশুনার করেন জনির বাবা সাধন ভট্টাচার্য।
সকাল বিকাল দু বেলা এলাকার ১৫ জনকে পড়ান জনি। এ থেকে যে টাকা পান তা দিয়ে সংসারের খরচে যোগান দেন জনি।
জনির বাবা সাধন ভট্টাচার্য বলেন, জন্মের পর জনির সমস্যা দেখা দেয়। সে হাটতে পারে না। ২০১২ সালের দিকে পুরোপরি বসে যায় জনি। কারো সাহায্য ছাড়া কোন কিছু করতে পারে না।
সাধন ভট্টাচার্য আরো বলেন, জনির চিকিৎসা করতে গিয়ে সব কিছু বিক্রি করে শেষ। এখন প্রায় নি:স্ব আমার পরিবার। এখন অবশিষ্ট কিছু নেই। ভাড়া বাসায় থাকি। ছেলে ড্রাইভার। ছেলের আর জনির আয় দিয়ে কোনমতে চলে আমার সংসার।
জনির মা দুই বার স্ট্রোক করে বর্তমানে প্যারালাইজ। আমি নিজে দুবার স্ট্রোক করে বেঁচে আছি। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ। বাড়ির বাইরে দুরে কোথাও যেতে পারেন না। মেয়েকে দেখতে হয় বলেন সাধন ভট্টাচার্য।
জনি বলেন, বাবা ছাড়া আমার জীবন অচল। বাবার সাহায্যে ছাড়া আমি চলতে পারি না। জনি বলেন, শিক্ষা জীবনে আমি কখনো ফেল করিনি। সব পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়েছি।
একাধিক চাকরীতে পরীক্ষা দিয়েছি। মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু চাকরী হয়নি আমার। আমার একটি চাকুরী হলে ভাল হয়।
জনি বলেন, তিনি মাসে ৭০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পান। আমি প্রতিবন্ধীর কোটায় একটি চাকুরী চাই।
ডাক্তাররা বলেছেন, জনির মুলত নার্ভ ও ব্রেইনের সমস্যা। ডাক্তাররা তার রোগকে মোটর নিউরোন রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
রাঙামাটি প্রতিবন্দী চিকৎসা ও সেবা কেন্দ্রের তত্বাবধায়ক ফিজিও ডা. উক্রাচিং মারমা বলেন, রোগের ধরণ দেখে বলতে হবে জনি মুলত প্রতিবন্ধী। এ ধরণের রোগীদের ফিজিও থেরাপী দিতে হয়। আমাদের সেন্টারে আনা হলে আমরা বিনামূল্যে সেবা দিতে পারি। সে ক্ষেত্রে তাকে আমাদের সেবা কেন্দ্রে আনতে হবে।