সারা বছরই পর্যটকে মুখর থাকে রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো। কিন্তু টানাছুটির বেলায় এই উপস্থিতি বেড়ে যায় কয়েকগুন। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা হয়ে ওঠে বড় উপলক্ষ। বাড়তি এই পর্যটক সামলাতে ছাড় সহ নানান প্রস্তুতি নেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এতে এই খাতে ভালো ব্যবসার সাথে স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
এবারও ঈদুল আজহাকে ঘিরে পর্যটক বরণে নানান প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তবে বৈরি আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের কারণে ঈদের তৃতীয় দিনেও সেই কাংখিত পর্যটকের দেখা মিলেনি রাঙামাটিতে। পর্যটকদের আকর্ষণে রাঙামাটিতে ঈদের পরদিন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ২০% ও সাজেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১৫% ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি। এর বিপরীতে আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলোতে ৬০-৭০ শতাংশ বুকিং হয়েছে।
এবার ঈদে রাঙামাটিতে লক্ষাধিক পর্যটক আগমনের প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। রাঙামাটি শহরে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ৬৫ টি হোটেল-মোটেল ও ১৭টি ইকো রিসোর্ট ও কাপ্তাইয়ের নৈসর্গিক রিসোর্ট-কটেজসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট আছে। এরসা সাজেক প্রায় চারহাজার মানুষের ধারণক্ষম ছোটবড় ১১২টি কটেজ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ঈদেকে ঘিরে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ।
হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট (খাবারের দোকান), টেক্সটাইল (পাহাড়িদের তৈরি কাপড়), নৌযান এবং বিনোদন কেন্দ্রকে (ঝুলন্ত সেতুসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান) ঘিরেই মূলত রাঙামাটির পর্যটন খাত। সব মিলিয়ে এবার ঈদের এক সপ্তাহে ২০ কোটি টাকার ব্যবসার প্রত্যাশা এ খাত সংশ্লিষ্টদের। তবে ঈদের তৃতীয় দিন পার হলেও কাংখিত পর্যটক না আসায় এই প্রত্যাশা পূরণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সহসভাপতি চাইথোয়াই অং চৌধুরী বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য আমরা ঈদের পরদিন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছি। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত মাত্র ৭০ শতাংশ বুকিং পেয়েছি। ভেবেছিলাম এই ঈদে ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু বৃষ্টিপাতের কারণে প্রত্যাশার চেয়ে কম এসেছে পর্যটক। দেখা যাক, পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে, এখনও তো পর্যটক আসছে’।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ঈদকে ঘিরে আমাদের এখানে ৬৫টি হোটেল-মোটেল কটেজে পর্যটকদের জন্য সব ধরণে প্রস্তুতি রয়েছে। ঈদের পরদিন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ২০% ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছি। কিন্তু বুকিং হয়েছে ৭০ শতাংশ । আশা করি আগামী কয়েকদিনে আরও বাড়বে। পর্যটকরা আসছেন’।
রাঙামাটি পর্যটন ঝুলন্ত সেতু নৌযান ঘাট ইজারাদার মোঃ রমজান আলী বলেন, আশা করেছিলাম এই ঈদে ব্যাপক পর্যটক আসবেন। আমাদের ট্যুরিস্টবোট প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু আশানুরূপ পর্যটক আসেনি এখনো।
বৈরি আবহাওয়া আর বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙামাটির আইকন পর্যটন ঝুলন্ত সেতুতে দর্শনার্থীদের পদচারণা ছিল খুবই কম। গত তিনদিনে সেতুটি দেখতে প্রায় ৫ হাজার দর্শণার্থী এসেছেন। অথচ এই সময়ে আগের বছরগুলোতে এর তিনগুন দর্শণার্থীর উপস্থিতি ছিল সেখানে।
পর্যটন সেতুর টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান জানান, ঈদের দিন ও পরদিন বৃষ্টির কারণে পর্যটক কম এসেছেন। তবে আজ(শনিবার) আকাশ পরিস্কার থাকায় দর্শর্ণাথীদের উপস্থিতি বেশ ভালো। বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে’।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘ঈদের আগেই আমাদের ৫০ ভাগ আগাম বুকিং হয়ে যায়। প্রত্যাশা ছিল শতভাগ বুকিংয়ের। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ৬০-৭০ ভাগ বুকিং হয়েছে। এবার কম এসেছেন পর্যটক। প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাঙামাটি জেলা পুলিশ। বিশেষ করে যাতায়াত ব্যবস্থা ও পর্যটন স্পটগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নৌপুলিশও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য।