রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হাজাছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের একটি গোপন আস্থানার সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাঙামাটি সদর জোনের কাউখালী সেনা ক্যাম্প। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এই বিশেষ অভিযান। একই সাথে সন্ত্রাসীদের আস্থানার অস্থিত্ব প্রকাশ পায় সেনাবাহিনী। এঘটনায় শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় রাঙামাটি সদর জোন এ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানান ব্রিগেড মেজর তাজবীদ বিন নজরুল ও(সদর সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন,রাঙামাটি সদর জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মুহাম্মদজুনাঈদ উদ্দীনসহ সেনাবহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্রিগেড মেজর বলেন, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে অশান্তি পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে আসছে। আপনারা অবশ্যই অবগত রয়েছেন সম্প্রতি চাঁদার টাকা না পেয়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলায় মোবাইলের টাওয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে। ইউপিডিএফের জন্য মায়ানমার থেকে আসা গোলাবারুদ ধরা পড়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করে পাহাড়ি বাঙালি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।
রাঙামাটির (সদর সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ঘটনাটি কাউখালী উপজেলায় সেহেতু নিয়ম অনুযায়ী কাউখালী থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্ততি চলছে। পুলিশের পক্ষ হতে সন্ত্রাসী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সেনাসূত্রে জানান, বিশেষ অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে ইউপিডিএফ (মূল) এর শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে সেনা সদস্যরা এলাকাটি ঘিরে ফেলে পরে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ইউনিফর্ম, বাইনোকুলার, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত ওয়াকি-টকি সেট, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক ও চাঁদা আদায়ের রশিদসহ অন্যান্য নথিপত্র ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পালিয়ে যাওয়া ইউপিডিএফ (মূল) সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।এলাকাজুড়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমনে সেনাবাহিনীর তৎপরতা এবং আগামীতে তৎপরতা আরো বাড়ানো হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে নিরাপত্তাবাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের অভিযান ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।
অপরদিকে বরাবরের মতো ইউপিডিএফ (মূল) ঘটনাটিকে ভিন্ন খেতে প্রবাহিত করতে ও সত্য আড়াল করতে তাদের সমর্থক গোষ্ঠীদের মাধ্যমে কাউখালী এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করছে। বিশেষ করে তারা শিশু ও মহিলাদের ব্যবহারের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে নাজেহাল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে ও সোশ্যাল মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত অপপ্রচারও শুরু করেছে। শুধু তাই না, শিশু ও মহিলাদের মাধ্যমে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে সেনা বাহিনী কর্তৃক উদ্ধারকৃত গুরুত্বপূর্ণ নথি ও সরঞ্জামাদি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ভিডিও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা গেছে। অঞ্চলটিতে বসবাসরত নাগরিকদের নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সন্দেহজনক কোন তথ্য বা গতিবিধি নজরে এলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক জানানোর সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন,কাউখালি উপজেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মামুনি মারমা বিবৃতিতে দুই নেত্রী এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।