পাহাড়ে শোভা পাচ্ছে জুমের পাকা ধান। সূর্যের মিষ্টি রোদ যখন সেই ধানের ওপর পড়ে তখন মনে হয় সোনা ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ে। যখন মৃদুমন্দ বাতাসে বয়ে যায় তখন মনে হয় সোনালি ঢেউ খেলা করছে। মনোরম সেই দৃশ্য। পাকা ধানের গন্ধ ম ম করছে রাঙামাটি জুরাছড়ি উপজেলার পাহাড়।
গেল বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনিবার উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নে করইদিয়া, চাম্পাইতলী, ডানে তেছড়ি, মৈদং ইউনিয়নের কাঠাল তুলী, বনযোগীছড়া ইউনিয়নের বালিশ পাড়া, শেরেহুলছড়া, জুরাছড়ি ইউনিয়নের আমতলা, থাচি, বৃগুপাড়া ঘুরে দেখা যায়, জুমিয়ারা পাহাড়ে ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, মরিচ,টিল, আদা, হলুদ, যব, সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, টকপাতা, ফুলসহ বিভিন্ন রকমের সবজি চাষাবাদ করেছে। জুমের ধান ঘরে তুলতে বিভিন্ন বয়সি মানুষ ধান কাটতে নেমেছে জুমে। ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখন জুমিয়ারা। এবছর জুমের আশানুরূপ ভালো ফলন হয়নি বলে দাবি জুমিয়াদের।
জুরাছড়ি উপজেলায় বসবাসরত মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা, পাংখো জনগোষ্ঠীর অধিকাংশরাই জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। তারা জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।
বালিশ পাড়ায় বিজয় গিরি চাকমা ও আমতলার চারু বিকাশ চাকমা, অর্নেষ চাকমা বলেন, সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়াই ফলন তেমন একটা ভালো হয়নি। বার্ষরিক খাদ্য পুরনে হিমশিম খেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের প্রবিন হেডম্যান সমূর পাংখোয়া বলেন, শুরু থেকে পাহাড়ে জুমচাষ করে আসছেন তিনি। তার অভিজ্ঞতা বর্তমানে মোটেই ভালো নয়। যে পরিমাণ শ্রম এবং খরচ জুমচাষে করেছেন, সে খরচের অনুপাতে আশানুরুপ ফলন পাওয়া যায় না।
মৈদং ইউনিয়নের তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার বাসিন্দা রাজেন মুনি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আগে জুমচাষে বিভিন্ন সার ঔষধ ব্যবহার না করলেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে তা ব্যবহার করেও ফলন হয়না। কিন্তু মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে বসতি। তাই জুমের জায়গা কমে আসছে। এখন একই স্থানে প্রতি বছর জুমচাষ করতে হচ্ছে।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের উচ্চ শিক্ষিত মুনি শংকর চাকমা বলেন আধুনিক জাতগুলো স্থানীয় জাতের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি ফলন দিচ্ছে। সুতরাং এলাকায় খাদ্যের চাহিদা পুরনে কৃষি বিভাগ যদি নতুন জাতগুলোর বীজ জুম চাষিদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছড়িয়ে দিতে পারা যায়, তাহলে স্থানীয় জাতের বাইরে উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার করে অধিক লাভের মুখ দেখবে। তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জুরাছড়ি উপজেলায় চার ইউনিয়নে ৭২০ হেক্টর পাহাড়ের জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩শ মেট্টিকটন।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন পাহাড়ের জুম চাষ থেকে জুমিয়ারা সারাবছরের খাদ্য সংরক্ষণ করে। এ বছর জুমের ফসলের ভালো ফলন হয়নি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহফুজ আহমেদ সরকার বলেন, মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ আরম্ভ হয়। প্রায় তিন-চার মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে জুমিয়ারা। কৃষি বিভাগ থেকে প্রান্তিক কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ ও সার প্রদান করা হয়। এছাড়া উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে চাষিদের রোগবালাই দমনে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়ার তারতম্যতায় যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়াই জুম চাষীরা আশা অনুরুপ ফলন হয়নি।