রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রোমেল চাকমার উপর হামলার ঘটনায় জড়িত অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ছাড়া বাকীরা সবাই ডাক্তার রোমেলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। শর্মিষ্ঠা রায়ের পরিবার ক্ষমা প্রার্থণা করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনী আশ্রয় নেবেন না ডাক্তার রোমেল চাকমা। তবে হামলার সাথে জড়িত এক অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডাক্তার রোমেল চাকমা চাইলে আইনী প্রতিকার চাইতে পারবেন।
সোমবার বিকালে রাঙামাটি চাকমা রাজ দরবারে এক সালিশি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সালিশি বৈঠক পরিচালনা করেন চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। এ সময় রাজাকে সহায়তা করেন রাঙামাটির বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নিরূপা দেওয়ান, টুকু তালুকদার এবং রাঙামাটি পৌর কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা।
উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বসুমিত্র চাকমা, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন ডা. আশীষ কুমার তঞ্চঙ্গা, ডা. শুভ্রসোম চাকমা, রাঙামাটির সিনিয়র সাংবাদিক সত্রং চাকমাসহ রাঙামাটির সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা।
সালিশে উভয় পক্ষের কথা শুনে সালিশে কৃতকর্মের জন্য সালিশি সভায় রোমেলের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করে রাঙামাটি শহরের রায় বাহাদুর সড়কের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা রায়, তার মেয়ে আনুশা চৌধুরী, প্রিসলি চৌধুরী, প্রিসলির জামাই মো. আহাদ।
সালিশে ডাক্তার রোমেল চাকমা বলেন, আমি চেয়েছি যারা আমার উপর হামলা করেছে তারা আমার কাছে এসে সরি বলুক। এর বেশী কিছু চাইনি। রোমেল বলেন, তার উপর হামলার ঘটনায় ক্ষমা চাওয়া ব্যাক্তিরা ছাড়াও আরো এক যুবক জড়িত ছিল। যে প্রথম তাকে আক্রমন করে। কিন্তু আমি তাকে এখানে দেখতে পাচ্ছি না। সে যুবক আমাকে বেশী আঘাত করেছে।
ডাক্তার রমেলের এ বক্তব্যের পর এ বিষয়টি শর্মিষ্ঠার কাছে জানতে চায় চাকমা রাজা । তাকে হাজিরের জন্য সালিশ চলাকালে সময় দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তাকে হাজির করা যায়নি। সময় শেষে শর্মিষ্ঠা রায় সবার পক্ষ হয়ে সালিশি বৈঠকে ক্ষমা চান।
পরে সালিশে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় অজ্ঞাত হামলাকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডাক্তার রমেল চাইলে দেশের প্রচলিত আইনী বিচার চাইতে পারবেন। ডাক্তার রোমেলের বিরুদ্ধে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা করা ডায়েরী অতি দ্রুত প্রত্যাহার করে নিবে শর্মিষ্ঠার পরিবার।
প্রসঙ্গত ডাক্তার রোমেল প্রতিদিন চেম্বার শেষ করে শরীর চর্চার জন্য রায় বাহাদুর সড়কে সাইক্লিং করেন। গত ২৮ ডিসেম্বর একটি বেপোরোয়া মাইক্রোবাস তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ গাড়িতে ছিল শর্মিষ্ঠা রায়ের কনিষ্ঠ কন্যা আনুশা চৌধুরীসহ কয়েকজন।
ডাক্তার রোমেল চাকমা ধাক্কা দেওয়ার প্রতিবাদ করতে গেলে গাড়িতে থাকা লোকজন গাড়ি থেকে নেমে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে মাথাসহ শরীরে নানান জায়গায় আঘাত প্রাপ্ত হয়।
এ ঘটনার পর গাড়িতে থাকা লোকজন রোমেল চাকমার কাছে ক্ষমা না চেয়ে উল্টো থানায় অভিযোগ দিলে রাঙামাটির সিভিল সোসাইটি, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ ও দোষীদের আইনের আওতার দাবী জানিয়ে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বাংলাদেশ রাঙামাটি জেলা শাখা।
রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী বলেন ডাক্তার রোমেল একজন সম্মানিত লোক। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। বিষয়টি যদি সামাজিকভাবে সমাধান হয় তাহলে ভাল।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ জাহেদুল ইসলাম বলেন, উভয় পক্ষ আমাদের কাছে এসেছিল। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা যায় কিনা রাজার পরামর্শ চেয়েছি। উভয় পক্ষ রাজার কাছে গিয়েছে। রাজার রায়ে সন্তুষ্ট না হলে ভিক্টিম আমাদের কাছে আসলে আমরা আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে আমরা চাই এটি সামাজিকভাবে সমাধান হোক।