প্রাক-প্রাথমিকের পর এবার প্রাথমিকে মাতৃভাষায় বই পেল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের বই।
১ জানুয়ারি থেকে বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় সবাসকারী ১১টি সম্প্রদায়ের মধ্যে চাকমা, মার্মা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই বিতরণের পাশাপাশি নিজ মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতরণ চলবে।
এদিকে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি মাতৃভাষার বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ২৪ হাজার ২৫১ শিক্ষার্থী। কিন্তু ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষক না থাকায় মাতৃভাষা শিক্ষা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট মহল।
বান্দরবানে জেলায় চাকমা মারমা ত্রিপুরা বম খুমী খেয়াং লুসাইসহ রয়েছে ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এসব সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে তাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা বিলুপ্তির পথে। তাই পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে সরকার নিজ নিজ মাতৃভাষায় বইপুস্তক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই হিসেবে বিতরণ করে আসছে।
এ বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ১৭ হাজার ৫৪৫টি মারমা মাতৃভাষার বই, ৫ হাজার ১৯৫টি ত্রিপুরা মাতৃভাষার বই এবং ১৫১১টি চাকমা ভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের নিজ মাতৃভাষার বর্ণমালা শেখাতে সপ্তাহে এক দিন পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নিজ মাতৃভাষার এসব বই পড়ানো হয় বলে জনান শিক্ষকরা।
নতুন বই নিতে আসা খুদে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলেন, আমরা তো নিজ ভাষায় পড়তে পারিনি। আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিজ ভাষার অক্ষর জানার সুযোগ হলো। নিজের ভাষায় বর্ণমালা সম্পর্কে জানতে পারবে, লিখতে পারবে ও পড়তেও পারবে। সন্তানরা মাতৃভাষায় বই পাওয়ায় আমাদের খুবই ভালো লাগছে।
নিজেদের ভাষা ও বর্ণমালা শিখতে ও সংরক্ষণে সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব বই সঠিকভাবে পড়তে পারছে না বলে জানায় অভিভাবকরা। তাই বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দানের দাবি জানায় তারা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম জানান, এবার বান্দরবানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে মাতৃভাষায় ছাপানো ২৪ হাজার ২৫১টি বই। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় সব বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। ভবিষ্যতে এ সমস্যার সমাধান হবে।
২০১৭ সালে পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজ ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে সরকার। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষক সহায়িকা ও শিখনচর্চা খাতা পায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা।