সবারই স্বপ্ন থাকে ভালো ক্যারিয়ার গঠন করার। আর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অনেকেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনাও করে থাকেন। তবে শুধু পড়াশোনা করলেই হবে না। এর জন্য জরুরি একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ী চলতে হয়। ভালো ক্যারিয়ার গড়তে হলে অনেক বিষয়ই বিবেচ্য। সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আফসানা আক্তার
প্রতিদিনের কাজের তালিকা করুন
ক্যারিয়ার গঠনে পরিকল্পনা করাটা অনেক বড় একটা বিষয়। তাহলে ক্যারিয়ারের সাফল্য অর্জন সহজ হয়ে আসে। পরবর্তী দিন আপনি কী কী কাজ করবেন তার পরিকল্পনা পূর্বের রাতেই করে রাখুন। সবচেয়ে ভালো হয় ডায়েরি অথবা মোবাইল নোটবুকে ধারাবাহিকভাবে লিখে রাখলে। যাতে কোনো কাজই বাদ যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে। পরবর্তী দিনে কাজ করার সময় এই তালিকাটি দেখে নিলেই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করা সহজ হবে।
প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন
বলা হয়, সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। তাই নিজের সময়কে যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। কাজের তালিকার সব কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি কাজের জন্য আনুমানিক সময় নির্ধারণ করে রাখুন। এতে কাজগুলো যথাসময়ে খুব সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। সময় অপচয় হবে না।
একই সঙ্গে একাধিক কাজে মনোনিবেশ করা থেকে বিরত থাকুন
কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্যে অনেকেই একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে থাকেন। তবে এটি একটি ভুল পদ্ধতি। একই সময়ে দুই বা ততোধিক কাজ করলে কর্মদক্ষতা কমে যায় এবং সম্পন্ন হওয়া কাজগুলোর মধ্যেও ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। যা পুনরায় করতে আরো সময়ের প্রয়োজন হয়।
অপচয় হওয়া সময়কে কাজে লাগান
নির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাইরেও কখনো কখনো রাস্তায় যানজট বা কারও কাছে কোনো কাজে গিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয়। সময় তালিকায় থাকা সেই কাজগুলোর সময় নির্দিষ্ট নয় এমন কাজগুলো এই সময়ের মধ্যে করে ফেলুন। এতে করে অলস সময়টাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।
অপছন্দনীয় বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে সাজান
আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলোর মধ্যে এমন অনেক কাজই থাকে যেগুলো আমাদের পছন্দের কাজ নয় কিন্তু তারপরও আমরা করে থাকি। তাই দিন-রাতের যে সময় আপনি বেশি মনোযোগী ও সক্রিয় থাকেন তালিকার কঠিন, অপছন্দনীয় কাজগুলোকে সে সময় করার জন্য রাখুন। এতে একঘেয়েমি দূর হবে ও মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।
বিশ্রাম ও খাদ্যাভাসের প্রতি নজর রাখুন
বিশ্রামহীনভাবে কাজ করতে থাকলে কাজে মনোযোগের অভাব হতে পারে। আবার শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতাও আসতে পারে যে কোনও সময়। অন্যদিকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত ঘুম, বিনোদন, পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি অভ্যাস শরীরের কর্মদক্ষতাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকেও সমান গুরুত্ব দিন।
দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো লিস্টে চিহ্নিত করে রাখুন
গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর ওপর ফোকাস রাখতে সে কাজগুলোকে তালিকায় চিহ্নিত করে রাখুন, যাতে কাজগুলো কোনওভাবে অসম্পন্ন না থাকে। প্রয়োজনে সে কাজগুলোকে আগে শেষ করার চেষ্টা করুন।
এ ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের ক্যালেন্ডার বা গুগল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন। অথবা অ্যালার্ম টুল ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে কাজগুলো অসম্পন্ন থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে।
প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিনই সম্পন্ন করুন
অতিরিক্ত কাজের চাপ অথবা কাজের প্রতি অনীহার কারণে আমরা প্রতিদিনের কাজগুলো প্রতিদিন শেষ করি না। এতে পরবর্তী দিনের কাজের চাপ আরও বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিনের কাজের তালিকায় সব কাজ যথাসময়ে শেষ করতে চেষ্টা করুন। কারণ কোনো কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেলে তা পরের দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সে দিনের কাজ সম্পাদনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
হতাশ হবেন না
আমরা যা পরিকল্পনা করি অনেক সময়ই সেভাবে কাজগুলো হয় না। পরিকল্পনামাফিক চলতে গিয়ে অনেক বাধা বা প্রতিবন্ধকতা আসতেই পারে বা পরিকল্পনা অনুসরণে কখনো ছেদ পড়তে পারে। এতে কখনওই হতাশ হবেন না। দৃঢ়তার সঙ্গে পরের কাজগুলোর জন্য পরিকল্পনায় ফিরে আসুন। মনে রাখবেন একবার যদি আপনি হতাশ হয়ে পড়েন তাহলে পুনরায় সেই কাজগুলোকে শুরু করা খুবই কষ্টকর হবে।
প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠুন
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনাকেও এগিয়ে যেতে হবে। আর তাই দ্রুত কাজ সম্পাদন করার জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে বহুগুণ। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠুন।
দিনশেষে কর্মপরিকল্পনার পর্যালোচনা করুন
বরাদ্দ সময়ে কাজ কতটা করতে পারলেন তা বুঝতে দিন শেষে পরিকল্পনার পর্যালোচনা করুন। সারা দিনের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে কি না, পরিকল্পনা সঠিক ছিল কি না, নতুন কোনো পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কি না- এসব বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে পরবর্তী দিনের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে বাস্তবমুখী ও যথার্থ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন।
একজন ব্যক্তি তখনই সফল হন যখন তিনি কাজের প্রতি একাগ্র ও সৎ থাকেন। তাই ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখুন এবং ছোটখাটো সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে চলার মানসিকতা তৈরি করুন। এক দিন দেখবেন, সফলতা আপনার মুঠোয়।-খবরের কাগজ।