পাহাড়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা সম্পত্তির অংশীদার হতে পারেন না। নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করতে হেডম্যান (মৌজা প্রধান) দের কাজ করতে হবে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় হেডম্যানদের কাজ করার আহবান জানিয়েছেন রাঙামাটি সংসদীয় আসনের সদস্য দীপংকর তালুকদার।
বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি জেলা পরিষদের এনেক্স ভবনের সম্মেলন কক্ষ রাঙামাটি হেডম্যান এসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে এ আহবান জানান দীপংকর তালুকদার।
তিনি আরো বলেন, শত শত বছর ধরে পাহাড়ের ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ সমাজের কল্যাণে হেডম্যান কার্বারীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেলেও পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তী বাংলাদেশের একাধিক সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলেও কোন সরকারই হেডম্যানদের দুঃখ কষ্ট উপলব্ধি করার চেষ্টা করেনি। কোন সরকার তাদের সাথে দেখা পর্যন্ত করেনি।
আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হেডম্যানদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনেছে। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন পার্বত্য জেলার সার্কেল চীফ এবং হেডম্যানদের সাথে দেখা করেছিলেন।
তিনি বলেন, প্রথাগত এসব হেডম্যান-কার্বারীদের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করা হবে।
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের হেডম্যান কার্বারীদের প্রতিষ্ঠান একটি শক্তিশালী প্রথাগত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অবৈধ অস্ত্রধারীদের কারণে হেডম্যান কার্বারীরা তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। অবৈধ অস্ত্রধারীরা উল্টো হেডম্যান কার্বারীদের বিচার করে। এতে প্রথাগত প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের কাছে এখনো একটি নির্ভরযোগ্য ভরসার প্রতিষ্ঠান হেডম্যান কার্বারীদের প্রতিষ্ঠান। হেডম্যানরা শত শত বছর ধরে পাহাড়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা, বিচারিক কাজ, রাজস্ব আদায়, কৃষ্টি সংস্কৃতি রক্ষা, শিক্ষা, সমাজ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের আরো বেশী কাজে সম্পৃক্ত করা হলে তাহলে দেশের মঙ্গল হবে।
দেবাশীষ রায় আরো বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু আমাকে চাকমা সার্কেল চীফ ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ পেয়ে আমি চাকমা সার্কেলের চীফের দায়িত্ব পালন করছি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান পাহাড়ের হেডম্যান কার্বারীদের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। তার সহযোগীতা পা্ওয়া গেলে পাহাড়ের হেডম্যান কার্বারীরা আরো জন সেবা করতে পারবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, হেডম্যান কার্বারীদের এখনো নিজস্ব কোন কার্যালয় নেই। তারা এক প্রকার ভাসমান অফিসে দপ্তরের কাজ কর্মকর্ম করে যান।
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তি মতে পার্বত্য জেলা পরিষদের হাতে ভুমি বিভাগটি হস্তান্তর করার কথা বলা হলেও এখনো তা হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে ভুমি সমস্যা রয়ে গেছে পাহাড়ে। পাহাড়ে গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চুক্তি যথাযত বাস্তবায়ন করা দরকার। পার্বত্য চুক্তির আলোকে ভূমি সমস্যার সমাধান না হলে পাহাড়ে সমস্যা সৃষ্টি হবে। ভুমি বন্দোবস্ত বন্ধ থাকার কারণে লাখ লাখ ভূমিহীন সংখ্যা বাড়ছে। চুক্তির পূর্ববর্তী ভূমিহীন সংখ্যা ১ লাখ হলে বর্তমানে তা ৫ লাখে দাড়িয়েছে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এজন্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে বন্দোবস্ত চালুর দাবী করেন অংসুই প্রু চৌধুরী।
তিনি আরো বলেন, হেডম্যানদের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে জনসেবা বাড়বে। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে সরকারের সুনজর কামনা করেন অংসুই প্রু চৌধুরী।
রাঙামাটি হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি চিং কিউ রোয়াজা সভাপতির বক্তব্যে বলেন, হেডম্যানরা ভুমি মালিকদের কাছে খাজনা আদায় করে। এ খাজনার পরিমাণ একেবারে নগন্য। এ খাজনার টাকার পরিমাণ বাড়ানো যায় কিনা সরকারের সহযোগীতা কামনা করেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব শিল্পী রানী রায়, ইউএনডিপি প্রতিনিধি ঝুমা দেওয়ান।
সম্মেলন শেষে রাঙামাটি হেডম্যান এসোসিয়েশনের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন দীপংকর তালুকদার। এতে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন চিংকিউ রোয়াজা, সাধারণ সম্পাদক জ্যোর্তিময় চাকমা কেরল ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয় বিশ্বজিৎ চাকমা।