২০২০ সালের ৪ আগস্ট এক রৌদ্রজ্জল দুপুর। সেদিন ছিল ঝলমলে রোদের আলোর ছটা। সেই আলোর ছটায় আরোও আলোকিত করতে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে সেদিন যোগদান করেছিলেন মুনতাসির জাহান। তিনি এমন সময় যোগদান করেছেন, তখন মহামারী করোনার মরনব্যাধি থাবা বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করেছে। তবুও এই পরিস্থিতিতে সামলে নিয়ে তিনি কাপ্তাইয়ের সকল শ্রেণীর মানুষকে আগলে রেখেছেন স্ব- মহিমায়।
সদা হাস্যময়, মানবিকতা, কর্মদক্ষতা, কর্মচাঞ্চল্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান সহ সর্বোপরি কাপ্তাইকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য তিনি তৈরী করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্বম্ভ ” মুক্তির সোপান” ” জাতির পিতার ম্যুরাল “আই লাভ কাপ্তাই ” ” সুরপা কাপ্তাই ” জলতরঙ্গ ” ” ভ্রাম্যমান পাঠাগার সহ অনেক নান্দনিক স্থাপনা। বিগত আড়াই বছরের অধিক সময়ে কাপ্তাইয়ের প্রতিটি উন্নয়নে যাঁর নিপুণ হাতের ছোঁয়া ছিল।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারী) বিকেল ছিল সেই মানবিক কর্মকর্তার বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে “সম্মিলিত বিদায় উদযাপন পরিষদ” এই বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেন। সেই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজেও কেঁদেছেন এবং উপস্থিত বক্তা ও আবেগে অশ্র জড়ালেন সকলে। বিকেল ৩ টা হতে শুরু হয়ে একটানা রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে সেই বিদায় অনুষ্ঠান।
খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সাংসদ দীপংকর তালুকদার বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এসময় তিনি বলেন, ইউএনও মুনতাসির জাহান কাপ্তাই উপজেলাকে সাজিয়ে তুলতে অনেক পরিশ্রম করেছে। কাপ্তাইয়ের জন্য তিনি যেভাবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন নান্দনিক স্থাপনা সৃষ্টি করেছেন আমার বিশ্বাস কাপ্তাইয়ের বাসিন্দারাও ইউএনও মুনতাসির জাহানকে অনেক আপন করে নিয়েছে। এবং তাঁর বিদায় বেলায় কাপ্তাই থেকে অনেক সুন্দর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ইউএনও মুনতাসির জাহান কাজের অনেক প্রশংসা করছি। তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে অনেক অনেক সফলতা কামনা করছি।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক এর সভাপতিত্বে বিদায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিদায় উদযাপন কমিটির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য দেন বিদায় উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন মিলন।
কাপ্তাই প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্ত ও বাচিক শিল্পী রওশন শরীফ তানি এর সঞ্চালনায় এসময় আরো বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য দীপ্তিময় তালুকদার, কাপ্তাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দীন, কাপ্তাই উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উমেচিং মারমা, ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ, ৫নং ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরনজীত তনচংগা, কাপ্তাই বিএসপিআই এর অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন হাওলাদার, কাপ্তাই চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খিয়াং, কর্ণফুলী সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ এএইচএম বেলাল চৌধুরী, কাপ্তাই ওয়াগ্গা চা বাগান এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমীনুর রশীদ কাদেরী, কাপ্তাই বিএন স্কুল এন্ড কলেজ এর উপাধ্যক্ষ এম জাহাঙ্গীর আলম, কাপ্তাই উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা এনামুল হক হাজারী, কাপ্তাই অফিসার্স ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিপু চন্দ্র দাশ, কাপ্তাই হেডম্যান এসোসিয়েশন সভাপতি থোয়াই অং মারমা, কাপ্তাই নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জয়সীম বড়ুয়া, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আমির হোসেন, কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কান্তি ভট্টাচার্য্য, কাপ্তাই নতুন বাজার বণিক কল্যান সমিতি সাধারন সম্পাদক একরামুল হক, কাপ্তাই প্রেস ক্লাব সভাপতি মোঃ কবির হোসেন, কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক ঝুলন দত্ত।
বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান তাঁর বক্তব্য আবেগগণ কন্ঠে বলেন, কাপ্তাইয়ে যোগদানের পর থেকেই কর্মজীবনে এখানকার মানুষ, জনপ্রতিনিধি সহ সকলের যে সহযোগিতা ও ভালবাসা পেয়েছি তা আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা। আমি চেষ্টা করেছি কাপ্তাইয়ের মাটি ও মানুষের কল্যাণে সবসময় কাজ করতে। কাপ্তাইয়ে আমি প্রতিটি দিনই আনন্দ নিয়ে কাজ করেছি। কাপ্তাই থেকে হয়তো শারীরিকভাবে আমি দুরে চলে যাচ্ছি কিন্তু মানসিকভাবে আমি কাপ্তাইয়ে সবসময় অবস্থান করবো। আমি কাপ্তাই থেকে অজস্র মানুষের ভালবাসা নিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার জীবনের সেরা বিদায় সংবর্ধনা কাপ্তাই থেকে নিয়ে যাচ্ছি। এই দিনটি আমার জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সবশেষে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় রাত ৯ টা অবধি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।