অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে রাঙামাটির মানিকছড়ি এলাকার সরকারি শুকর খামারের শুকরগুলো। গত ৭ দিনে মারা গেছে ৭০টি শুকর। আক্রান্ত হয়েছে আরো অর্ধ শতাধিক শুকর। খামারে ১৪ প্রজাতির ৩৯৮টি শুকর রয়েছে।
তবে কি রোগে শুকরগুলো মারা যাচ্ছে তা নির্নয় করতে পারেনি খামার কর্তৃপক্ষ। খামারে থাকা শুকরগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গঠিত মেডিকেল টিমের চিকিৎসকরা।
সোমবার দুপুরে খামারে গিয়ে দেখা যায়, খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ডা. লেনিন দের নেতৃত্বে ট্রানকুলাইজার গান ( দুর থেকে ইনজেকশন পুশ করার বিশেষ বন্দুক) মাধ্যমে শুকরদের ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছে।
এ সময় ডা লেনিন দে বলেন, গত ১৩ নভেম্বর আমি খামার পরিদর্শন এসে দেখি বেশ কয়েকটি শুকর অসুস্থ আর তিনটা শুকর মরে পড়ে আছে।
বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার ডিএলও স্যারকে জানিয়েছি। স্যার তাৎক্ষনিক চার সদস্যের একটা মেডিকেল টিম গঠন করে দিয়েছেন। বর্তমানে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ মতে আমরা শুকরগুলো চিকিৎসা দিচ্ছি। শুকরের এ রোগ চিহ্নিত করতে রাঙামাটিতে কোন ল্যাব নেই। হরতাল অবরোধের খুব কষ্ট করে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার সিডিআইএল ও চট্টগ্রামে সিভাসুতে পাঠাতে হয়েছে।
খামারের সার্বক্ষনিক দেখাশুনা করা স্টোর কিপার জীবন বিকাশ তঞ্চঙ্গা বলেন, গত ১৩ নভেম্বর শুকরের মৃত্যু হয়। সেদিন একসাথে তিনটি শুকর মারা যায়। এরপর এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৭০টি শুকর মারা যায়। জীবন বলেন, নিজ হাতে লালন পালন করে শুকরগুলো বড় করেছি। খুব খারাপ লাগছে। স্যারেরা ঔষধ দিচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কি কবর বুঝে উঠতে পারছি না।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. তুষার কান্তি চাকমা বলেন, বিষয়টি অবগত হবার পর আমি খামারে গিয়েছি। মেডিকেল টিম গঠন করে একটি শুকর ময়না তদন্ত করে চিটাগাং ভেটোনারি ইউনিভার্সিটিতে প্রেরণ করেছি। তাদের রিপোর্ট মতে চিকিৎসা চলতেছে। মৃত্য রোধ করা যাচ্ছে না।
অধিকতর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পিসিআর ল্যাবে নমুনা পাঠিয়েছি। এ রিপোর্টে রোগ নির্ণয় হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিলে শুকরের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে পারব বলে আশা করছি। আমরা ধারণা করছি এটি আফ্রিকার সোয়াইন ফিভার কিনা। তাই সবাইকে সচেতন হবার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ এ ভাইরাসে আক্রান্ত শুকরের মৃত্যুর হার ৮০-৯০ শতাংশ। সোয়াইন ফিভার হলে পাহাড়ে শুকর চাষীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পছন্দের মাংসের তালিকায় শুকর অন্যতম। তাই এ এলাকায় শুকর চাষের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৮৪ সালে রাঙামাটিতে শুকর খামার প্রতিষ্ঠা করে সরকার। রাঙামাটির এ খামার বাংলাদেশের একমাত্র সরকারী খামার।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করা ও এ এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পুরণ করতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে শুকরের বাচ্চা উৎপাদন করে সেগুলো সরবরাহ করে আসছে এ খামারটি।