রাঙামাটির বরকল উপজেলার ৪নং ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) মো. মামুনুর রশিদকে অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে সেই থেকে ভুষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ অফিসে যাচ্ছেন না। বর্তমানে তিনি এলাকার বাইরে। তার অনুপস্থিতির কারণে জন্ম ও মৃত্যু সনদসহ ইউনিয়নে বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিড়ম্বনায় এলাকার ভুক্তভোগী অনেকে। ভুষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বরকল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। নির্বাচন পরবর্তী ৫ বছর পূর্ণ হয়ে এর অনেক আগে তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে ভুষণছড়া ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ অত্যাবশ্যক বলে দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের।
এর আগে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনে ভুষণছড়া ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দীলিপ কুমার চাকমা। সবশেষ ৮ আগষ্ট ওই ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে মতামমতসহ প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এক দাপ্তরিক নির্দেশনা পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নাসরীন সুলতানা।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের ৪ জুন বরকল উপজেলার ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ৩নং ওয়ার্ডের ছোট হরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে জালভোট প্রদানের অভিযোগ করা হয়। এতে ভোট সুষ্ঠু হয়নি মর্মে এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করা হলে তদন্তের পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার ১০ জুলাই দেওয়া প্রতিবেদনে কেন্দ্রটিতে জালভোট প্রদান করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে সেখানে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদন দেওয়ার পরও আজ পর্যন্ত পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। এ মতাবস্থায় বাংলাদেশ গেজেট ৬ মে ২০২৪ খ্রি, (২০০৯) সনের ১১নং আইনের ২৯নং সংশোধনী (খ) উপধারা (৫) মোতাবেক ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বরকল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভুষণছড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মো. জলিল ও ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. রুহুল আমীন বলেন, মামুনুর রশিদ দলীয় প্রভাবে কারচুপি ও জালভোটে অবৈধভাবে ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এর মধ্যেও মেয়াদ শেষ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দায়িত্বে আছেন তিনি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে তিনি এলাকায় নেই। এতে সেবামূলক কার্যক্রমসহ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কাজে বিঘ্ন ঘটছে। তাই অবিলম্বে প্রশাসক নিয়োগ অত্যাবশ্যক।
বর্তমানে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করে ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রুপায়ন খীসা বলেন, চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় পরিষেবা ও দাপ্তরিক কাজে সমস্যা হচ্ছে।
তবে ফোনে যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, আমি এলাকাতেই ছিলাম। ব্যক্তিগত শারীরিক চিকিৎসাজনিত কারণে এখন (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম আছি। মামলার কারণে এতদিন ওই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত মোহাম্মদ নোমান বলেন, ভুষণছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অফিসে অনুপস্থিত থাকেন কিনা, তা জানা নেই। না থাকলেও সমস্যা নেই, তাকে আর অফিসেও যেতে হবে না। কারণ ইতোমধ্যে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের ব্যাপারে নির্দেশনা পাওয়া গেছে।